দুর্গাপুজোর সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে রাম-রাবণের গল্প। যুদ্ধের সময়ে রাবণকে পরাজিত করতেই দেবীর অকাল বোধন করেন রাম। এ গল্প তো সকলেরই জানা। দশমীর দিন রাবণ-নিধন করে অশুভের বিনাশ ঘটিয়ে শুভশক্তির পুনর্প্রতিষ্ঠা করেন রাম। কিন্তু জানেন কি, ভারতের একাধিক জায়গায় এই রাবণকেই ঈশ্বরজ্ঞানে পুজো করা হয়! কোথায় আর কেন জেনে নিন।
কানপুরের দশানন মন্দিরে পূজিত হন রাবণ। এই মন্দিরটির বয়স প্রায় ১০০ বছর, যা বছরে কেবল এক দিনই খোলা হয়– বিজয় দশমী বা দশেরার দিনে। এ দিন এই মন্দিরে রাবণকে ভক্তিভরে পুজো করা হয়, যিনি কিনা এক জন নিষ্ঠাবান শিবভক্ত ছিলেন।
রাজস্থানের যোধপুরে কেবল দশেরা নয়, গোটা বছর ধরেই পূজিত হন রাবণ। প্রচলিত বিশ্বাস বলে, সরস্বতী নদীর তীরে ছিল মন্দদ্বার রাজ্য। এই মন্দদ্বার রাজ্যের রাজা মন্দরের মেয়ে মন্দোদরীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রাবণের। তাই সেই বংশের উত্তরসূরিরা আজও রাবণের পুজো করেন এবং দশেরায় তাঁংর কুশপুত্তলিকা দাহ বা পোড়ানো কোনও কিছুই দেখেন না।
আর এক প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী, রাবণের স্ত্রী মন্দোদরী ছিলেন মধ্যপ্রদেশের বিদিশার মেয়ে। এই জায়গাতেও রাবণের অগণিত ভক্ত রয়েছেন। বিদিশার রাবণগ্রামে রাবণের একটি মন্দির আছে, যেখানে তাঁর ভক্তরা এসে পুজো দেন। দশেরার দিন তো বটেই, বিয়ে-সহ যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের আগে স্থানীয় বাসিন্দারা এই মন্দিরে পুজো দেন। রাবণের ১০ ফুট উচ্চতার একটি মূর্তি রয়েছে এই গ্রামে।
কথিত, হিমাচল প্রদেশের কাঙরায় নাকি কঠিন তপস্যা করে শিবের বর পেয়েছিলেন রাবণ। তাই এখানকার বাসিন্দারা রাবণ দহন করেন না দশমীর দিন।
উত্তর প্রদেশের বিসরাখে রাবণ মন্দির রয়েছে। মনে করা হয়, এখানেই জন্ম হয়েছিল লঙ্কার রাজার। এখানে দশমীর দিন রাবণ দহনের বদলে নবরাত্রির নয় দিন ধরে শোক পালন করা হয়ে থাকে।
অন্ধ্র প্রদেশেও রয়েছে রাবণের মন্দির। এই কাঁকিনাড় রাবণ মন্দিরটির ঠিকানা এ রাজ্যের পূর্ব গোদাবরী জেলায। শোনা যায়, শিবকে উৎসর্গ করে একটি মন্দির বানানোর জন্য রাবণ নিজেই নাকি এই জায়গাটিকে বেছে ছিলেন। সমুদ্রের একদম কাছেই এই মন্দিরটিতে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে।
মহারাষ্ট্রের গড়চিরোলিতে গোন্ড উপজাতির লোকেরা পুজো করে থাকেন রাবণ এবং তাঁর ছেলে মেঘানন্দকে। তাঁদের উৎসব ফাল্গুনে রাবণকে পুজো করা হয়ে থাকে।
মধ্যপ্রদেশের মন্দসুর এলাকাতেও রাবণের মন্দির রয়েছে। এখানে লঙ্কার রাজার বহু ভক্ত বসবাস করেন। মনে করা হয়, এখানেই মন্দোদরীর সঙ্গে রাবণের বিবাহ হয়েছিল।
এমন নানা কারণে, লোকগাথা মেনে ভারতের একাধিক জায়গায় পুজো পান রাবণরাজা। সীতাহরণকারী হিসেবে নয়, এক পরম পূজনীয় দেবতা হিসেবেই তাঁকে দেখে ভক্তকুল। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)