শারদ উৎসবের রেশ কাটতে না কাটতেই এসে গেল দীপাবলি আর শ্যামাপুজোর মরসুম। আলো ঝলমলে এই সময়েই কিন্তু রাত গভীর হলে অলৌকিক, অজানা গল্পের ডালি নিয়ে হাজির হয় নিশি।
তেমনই এক অদ্ভুত লোকদেবতার কথা ভেসে আসে পদ্মা-মেঘনার ওপার থেকে— যার নাম মুখে আনাও বারণ!
তিনি হলেন নিশাচর ঠাকুর, যিনি মহাকাল ভৈরবের অনুচর হয়েও এক লৌকিক অপদেবতা হিসেবে পূজিত হন।
বাংলাদেশের শান্ত জামিরতা গ্রামের নদীর তীরে পাগলনাথের মন্দির।
জনশ্রুতি, এক বাবা ও ছেলে রাতের অন্ধকারে সেই মন্দিরের পাশ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ ছেলের চোখ গেল এক বীভৎস দৃশ্যে।
অন্ধকারের বুক চিরে শরীরবিহীন একটি মুণ্ড যেন গড়িয়ে গড়িয়ে এগিয়ে আসছে তাদের দিকে। আতঙ্কে ছেলেটি চিৎকার করে উঠতে গেলে বাবা তার মুখ চেপে ধরেন। ফিসফিস করে বলেন, “চুপ, চুপ! ওঁর আসল নাম মুখে নিতে নেই! ও হচ্ছে নিশাচর।”
এই নিশাচর ঠাকুরের আর এক নাম নিকুন্দা, কারণ তার মাথা বা কাঁধ নেই। কেবল মুণ্ডটিই গড়িয়ে চলে। তবে কথিত, তাঁর দু’টি হাত ও দু’টি পা রয়েছে।
আরও বিস্ময়কর, তাঁর চোখ, নাক, মুখ দেখা যায় বুকের উপরে!
বেড়া থানার নাকালিয়ায় অপদেবতা হিসেবে তাঁর পুজো হতো, কিন্তু তাঁর নাম উচ্চারণেরও কিছু কড়া নিয়ম প্রচলিত ছিল। ভুল করে কেউ নাম নিয়ে ফেললে তাকে নাকি তিন বার ঠাকুরের নাম উচ্চারণ করতে হত।
এই নিশাচর ঠাকুরকে ঘিরে রয়েছে অদ্ভুত সব বিশ্বাস। কারও উপরে তাঁর বাতাস লাগলে তিনি নাকি পঙ্গু হয়ে যান। আবার তিনি যদি কারও উপরে কৃপা করেন, তবে তাঁর রাতারাতি উন্নতি হয়!
যদিও তিনি অপদেবতা হিসেবে পূজিত হন, তাঁর আলাদা করে কোনও নির্দিষ্ট থান দেখা যায় না। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তিনি মূলত শিব এবং দেবী কালীর অনুচর হিসেবেই পূজিত হয়ে এসেছেন।
সিরাজগঞ্জের জামিরতায় অগ্রহায়ণ মাসের অমাবস্যায় নিশাচরের পুজো হয়। এখানে ১২ জন দেব-দেবীর সঙ্গে তিনি পূজিত হন। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।