মধ্যপ্রদেশের মোরেনা জেলার সিহোনিয়ার কাছে কাঁকনমঠ মন্দির। প্রায় এক হাজার বছরের প্রাচীন স্থাপত্য ও রহস্যের এই বিস্ময়কর নিদর্শনটি শুধুমাত্র ধর্মীয় স্থান নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক রোমাঞ্চকর লোককথা। যার মূল চরিত্ররা সকলেই নাকি 'ভূত-প্রেত'!
একাদশ শতাব্দীর এই মন্দিরটি বর্তমানে ভগ্নপ্রায়। তবে এর কাঠামো আজও দাঁড়িয়ে আছে দৃঢ় ভাবে। এর সুউচ্চ চূড়া (শিখর) এবং অসাধারণ কারুকার্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই)-র তত্ত্বাবধানে এটি সংরক্ষিত।
এই মন্দিরটি প্রধানত দেবাদিদেব মহাদেব বা শিবের মন্দির। তার গর্ভগৃহে আজও শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। প্রাচীনকালে এটি ছিল একটি বৃহত্তর মন্দির চত্বরের অংশ। যেখানে মূল মন্দিরের চার পাশে আরও চারটি ছোট মন্দির ছিল।
এই মন্দিরের নির্মাণকাল আনুমানিক একাদশ শতাব্দী (১০১৫-১০৩৫ খ্রিস্টাব্দ)। এটি তৈরি করিয়েছিলেন কচ্ছপঘাটা বংশের শাসক রাজা কীর্তিরাজ। গ্বালিয়রে পাওয়া শিলালিপি থেকে জানা যায়, রাজা কীর্তিরাজ তাঁর রাজ্যের রাজধানী সিংহপানিয়ায় (বর্তমান সিহোনিয়া) পার্বতীর স্বামী শিবের জন্য এই অসাধারণ মন্দিরটি নির্মাণ করিয়েছিলেন।
মন্দিরের নামকরণের পিছনে দু'টি মত প্রচলিত রয়েছে। প্রথমত, লোককথা অনুসারে রাজা কীর্তিরাজ তাঁর প্রিয় রানি কাঁকনবতী বা কাঁকনাদেবীর (যিনি শিবের ভক্ত ছিলেন) ইচ্ছা পূরণ করার জন্য মন্দিরটি তৈরি করেন। রানির নামানুসারে মন্দিরের নামকরণ হয় 'কাঁকনমঠ'। দ্বিতীয় মতটি হল– মন্দিরটি হয়তো অতীতে অত্যন্ত মূল্যবান ধাতু বা সোনা (কনক) দিয়ে মোড়া ছিল! তাই এটির নাম হয় 'কনকমঠ'। যা পরে লোকমুখে 'কাঁকনমঠ' হয়ে যায়।
কাঁকনমঠ মন্দিরের সবচেয়ে বড় বিস্ময় এর নির্মাণশৈলীতে। এই মন্দিরের নির্মাণে কোনও রকম চুন, সিমেন্ট বা আঠালো পদার্থ ব্যবহার করা হয়নি। বদলে বিশাল বিশাল পাথর নিখুঁত ভারসাম্য বজায় রেখে এমন ভাবে একে উপরের উপর স্তূপীকৃত, যে এটি হাজার বছর ধরে ঝড়, ভূমিকম্প ও প্রতিকূল আবহাওয়া সহ্য করে দাঁড়িয়ে আছে! প্রাচীন ভারতীয় প্রকৌশলবিদ্যার এক বিরল উদাহরণ এই মন্দির।
কাঁকনমঠ নিয়ে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর লোককথাটি হল - এই মন্দিরটি নাকি মানুষের হাতে তৈরি নয়! বিশ্বাস করা হয়, এটি তৈরি করেছে একদল ভূত বা অশরীরী শক্তি! কথিত, ১১৫ ফুট উঁচু এই মন্দিরটি ভূত-প্রেতের দল মাত্র এক রাতের মধ্যে তৈরি করেছিল! কিন্তু, সেই কাজ শেষ হওয়ার আগেই পূর্ব আকাশে সূর্যোদয় হয়ে যাওয়ায় তারা নির্মাণ অসমাপ্ত রেখেই উধাও হয়ে যায়। তাই মন্দিরটিকে আজও অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়।
আরও একটি লোককথা অনুযায়ী, মন্দির তৈরিতে ব্যবহৃত পাথরগুলি এই এলাকার নয় বা এগুলি পার্শ্ববর্তী কোনও অঞ্চলে পাওয়াও যায় না। বিশ্বাস করা হয়, ভূতেরা নাকি দূর দূরান্ত থেকে এই বিশাল পাথরগুলি এক রাতের মধ্যে উড়িয়ে এনেছিল! স্থানীয়দের বিশ্বাস, মন্দিরের ভিতরে এক অলৌকিক অদৃশ্য শক্তি রয়েছে। যা এর কাঠামোকে এত বছর ধরে সুরক্ষিত রেখেছে।
মন্দিরটি ভূতের তৈরি — এই জনশ্রুতির নেপথ্যে মূলত দু'টি কারণ কাজ করে। প্রথমত, অবিশ্বাস্য নির্মাণশৈলী: একাদশ শতাব্দীতে কোনও প্রকার সিমেন্ট বা চুন ছাড়া এত উঁচু একটি মন্দির এক রাতের মধ্যে তৈরি করা সাধারণ মানুষের পক্ষে অসম্ভব বলেই মনে করা হয়। দ্বিতীয়ত, অসম্পূর্ণতা: মন্দিরের অসম্পূর্ণ চেহারা এবং খসে পড়া অংশগুলি এই ধারণা আরও মজবুত করেছে যে, কাজটি শুরু হলেও তা শেষ করা যায়নি।
আজও কাঁকনমঠ মন্দির একটি পবিত্র তীর্থস্থান হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রতি বছর মহাশিবরাত্রির সময়ে এখানে প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং 'ভূতের তৈরি' লোককথার জন্য এটি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এক অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। প্রসঙ্গত, সন্ধ্যা নামলেই এই মন্দিরে প্রবেশ নিষিদ্ধ! যা রহস্য আরও বাড়িয়ে তোলে। ( ‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’)। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।