Kolkata Putul Bari

পুতুল বাড়ির অতীতের অন্ধকারে লুকিয়ে আছে কোন রহস্য?

ভগ্নপ্রায় বাড়িটিতে ঘোস্ট হান্টারদের আনাগোনায় বিরক্ত বাসিন্দারা।

Advertisement
আনন্দ উৎসব ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:৪৫
Share:
০১ ১০

শোভাবাজার জেটির পাশে এক ভগ্নপ্রায় রহস্য: উত্তর কলকাতার শোভাবাজার জেটির কাছে চক্র রেলের লাইনের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো একটি বিশাল বাড়ি— যা পুতুল বাড়ি নামে পরিচিত। কালের গ্রাসে বাড়িটি আজ ভগ্নপ্রায়। কিন্তু, এর অলিন্দে লুকিয়ে আছে বাংলার 'বাবু কালচার'-এর সেই অন্ধকার দিনগুলির এক গা ছমছমে ইতিহাস!

০২ ১০

বাড়ির অবস্থান ও পরিচয়: উত্তর কলকাতার শোভাবাজার এলাকার এই বাড়ি আজও রহস্যে ঘেরা। উনিশ শতকের গোড়ার দিকে হুগলি নদী যখন ব্যবসার প্রধান অবলম্বন, তখন এই বাড়িটি ছিল একটি বিশাল গুদামঘর। এখানকার ধনী বাঙালি বাবুরা এখানে মূলত পাট, চাল ও অন্যান্য পণ্য মজুত রাখতেন। এর সুবিশাল এবং রোমান স্থাপত্যশৈলী এটিকে সে যুগেও বিশেষ পরিচিতি দিয়েছিল।

Advertisement
০৩ ১০

নাম রহস্য: এই বাড়িটির 'পুতুল বাড়ি' নামকরণ নিয়ে দু'টি প্রধান ধারণা প্রচলিত। প্রথমত - এর স্থাপত্যশৈলী: বাড়িটির ছাদে এবং বাইরের দেওয়ালে গ্রিক ও রোমান দেবদেবীর মতো দেখতে ছোট ছোট মূর্তি বা স্ট্যাচু খোদাই করা আছে। দূর থেকে এই মূর্তিগুলিকে পুতুলের মতো দেখায়! দ্বিতীয় - পুতুল-কন্যা: অন্য একটি লোককথা অনুসারে, এক ধনীর কন্যার পুতুল-প্রীতি ছিল চরম। তার পুতুলের সংগ্রহে বাড়ির ঘর ভরে যেত। এই কন্যার নাম থেকেই বাড়িটির নাম 'পুতুল বাড়ি'!

০৪ ১০

মর্মান্তিক মৃত্যু - পুতুল-কন্যার কাহিনি: পুতুল-কন্যার কাহিনিই এই বাড়ির ভৌতিক (কু)খ্যাতির অন্যতম প্রধান কারণ। কথিত, বাড়িটির মালিকের কন্যার পুতুলের প্রতি অস্বাভাবিক আকর্ষণ ছিল। রহস্যজনকভাবে অল্প বয়সেই তার মৃত্যু হয়। মেয়ের শোকে বাবা তার সমস্ত পুতুলগুলি এই বাড়িতে তালাবন্ধ করে রেখে দেন। বিশ্বাস করা হয়, সেই অতৃপ্ত আত্মার সঙ্গে তার পুতুলগুলিও এই বাড়িতে রয়ে গিয়েছে এবং রাতে তারা জীবন্ত হয়ে ওঠে!

০৫ ১০

বাবু কালচারের অন্ধকার দিক ও অত্যাচার: দ্বিতীয় এবং সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কাহিনিটি জড়িত সেই সময়ের ধনী বাবুদের সঙ্গে। লোকমুখে প্রচলিত, এই বাড়িটি শুধু গুদামঘর ছিল না। বাবুরা এখানে নৃত্যগীতের আসর বসাতেন। ক্ষমতাবলে তাঁরা এখানে নিরীহ যুবতীদের ধরে নিয়ে এসে তাঁদের উপর যৌন অত্যাচার চালাতেন এবং পরে নিজেদের অপরাধ ঢাকতে নির্মম ভাবে তাঁদের হত্যা করতেন!

০৬ ১০

অতৃপ্ত আত্মার কান্না ও প্রতিহিংসা: অনেকের মতে, সেই অত্যাচারিত ও নিহত যুবতীদের অতৃপ্ত আত্মা আজও এই বাড়িতে ঘুরে বেড়ায়! অশরীরী আত্মারা নাকি তাদের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে চায়। স্থানীয়দের মতে, গভীর রাতে বাড়ির উঁচু তলা থেকে ভেসে আসে মেয়েদের গোঙানির শব্দ, পায়ের আওয়াজ এবং নূপুরের ঝঙ্কার! এই কারণেই বাড়ির উপরের তলাটি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত!

০৭ ১০

রেললাইনের কম্পন, ভয়ের উৎস: পুতুল বাড়ির গা ঘেঁষে চক্র রেলের লাইন চলে গিয়েছে। যখনই এই পথে কোনও ট্রেন যায়, তখন পুরনো বাড়িটি প্রচণ্ড ভাবে কেঁপে ওঠে। এই কম্পন এবং পুরনো কাঠামোর অদ্ভুত শব্দে ভৌতিক আবহ আরও জমাট বাঁধে। অনেকে মনে করেন, এই কম্পনের সময়ে অশরীরী আত্মাগুলির উপস্থিতি আরও জোরালো হয়।

০৮ ১০

বর্তমান অবস্থা - ভাড়াটেদের জীবনযাপন: আশ্চর্যজনক ভাবে এটি কিন্তু সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত বাড়ি নয়। এর নিচতলায় এখনও কয়েকটি পরিবার ভাড়াটে হিসাবে বসবাস করে। দিনের বেলায় এই স্থানে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থাকলেও, কোনও ভাড়াটেই সন্ধ্যার পরে একা উপরের তলায় বা ছাদে যেতে সাহস করেন না। তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের পাশেই যেন সমান্তরালে চলে এক অন্য জগৎ!

০৯ ১০

প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর ও নিষেধাজ্ঞা: পুতুল বাড়ির ভূতুড়ে (কু)খ্যাতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর ও কৌতূহলী মানুষ এখানে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বাড়ির ভাড়াটেদের পক্ষ থেকে এখন কঠোর ভাবে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, শুধুমাত্র ভূতের গুজব যাচাই করার জন্য আসা মানুষজন তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে বিঘ্ন ঘটাচ্ছেন।

১০ ১০

ইতিহাস, মিথ নাকি শুধুমাত্র গুজব? পুতুল বাড়ি আজ এক হেরিটেজ বিল্ডিং। এর ইতিহাস আর রহস্য কলকাতার জনমানসে এমন ভাবে মিশে আছে যে, এটি কেবল একটি বাড়ি নয়, এটি শহরের এক অন্ধকার অধ্যায়ের প্রতীক! এটি সত্যি ভৌতিক কি না, তা আজও বিতর্কের বিষয়। কিন্তু বাবু কালচারের নির্মমতা, এক কন্যার বিয়োগ ব্যথা এবং সময়ের নীরবতা — সব কিছু মিলেই পুতুল বাড়িকে দিয়েছে কলকাতার অন্যতম রহস্যময় বাড়ির তকমা। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement