Why does Ganesha have an elephant head

গণেশের গজানন হয়ে ওঠা কেবল পৌরাণিক কাহিনি নয়, এর তাৎপর্যও চমকপ্রদ

আদিশক্তি পার্বতী ও দেবাদিদেব মহাদেবের প্রিয় পুত্র গণেশের মাথা হাতির মতো কেন? এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে এক রোমাঞ্চকর পৌরাণিক কাহিনিতে, যা গভীর অর্থবহ।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৫ ১৩:১১
Share:

প্রতীকী চিত্র।

আদিশক্তি পার্বতী ও দেবাদিদেব মহাদেবের প্রিয় পুত্র গণেশের মাথা হাতির মতো কেন? এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে এক রোমাঞ্চকর পৌরাণিক কাহিনিতে, যা গভীর অর্থবহ। সেই কাহিনি অনুসারে, এক বার দেবী পার্বতী স্নানে যাওয়ার আগে তাঁর শরীরের ময়লা থেকে একটি মানবশিশুকে তৈরি করেন এবং তাকে তাঁর কক্ষের প্রহরী হিসেবে নিযুক্ত করেন। পার্বতী সেই শিশুটিকে আদেশ দেন যে, তাঁর অনুমতি ছাড়া যেন কাউকে সেই কক্ষে প্রবেশ করতে না দেওয়া হয়।

Advertisement

এর কিছু ক্ষণ পরে স্বয়ং শিব সেখানে এসে পার্বতীর কক্ষে প্রবেশ করতে চান। কিন্তু 'দ্বাররক্ষী' শিশুটি তাঁকে বাধা দেয়। শিবের বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও সে নিজের অবস্থানে অনড় থাকে। শিব অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে নিজের ত্রিশূল দিয়ে তার মাথা কেটে ফেলেন!

পার্বতী এই ঘটনা জানতে পেরে শোকে এবং ক্রোধে বিহ্বল হয়ে পড়েন। তাঁর ক্রোধ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, তা সমগ্র সৃষ্টিকে ধ্বংস করে দিতে পারত! শিব তখন তাঁর ভুল বুঝতে পেরে পার্বতীকে শান্ত করেন। প্রতিশ্রুতি দেন যে, তিনি শিশুটির জীবন ফিরিয়ে দেবেন।

Advertisement

মহাদেব তাঁর অনুচরদের নির্দেশ দেন যে, তারা যেন উত্তর দিকে মুখ করে থাকা প্রথম জীবিত প্রাণীটির মাথা কেটে নিয়ে আসে। এই নির্দেশ মান্য করে অনুচরেরা একটি হাতির মাথা খুঁজে পান। শিব সেই হাতির মাথাটি শিশুটির শরীরের সঙ্গে জুড়ে তাকে পুনরুজ্জীবিত করেন। তিনিই শিশুটির নাম দেন গণেশ, যার অর্থ হল - গণদের ঈশ্বর বা নেতা।

গণেশের গজমুখ হওয়া কীসের প্রতীক?

গণেশের গজমুখ হওয়া কেবল একটি পৌরাণিক কাহিনি নয়, বরং এটি একাধিক গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ বার্তার প্রতীক।

প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের প্রতীক: হাতি হল প্রজ্ঞা, শক্তি এবং বুদ্ধির প্রতীক। গণেশের গজমুখ এই গুণাবলীর প্রতিনিধিত্ব করে। এটি বোঝায় যে, গণেশ কেবল বিঘ্নহর্তা নন, তিনি জ্ঞানেরও দেবতা।

বৃহৎ কর্ণ: হাতির কান বিশাল হয়। যা প্রতীকী ভাবে বোঝায়– গণেশ তাঁর ভক্তদের প্রতিটি প্রার্থনা এবং অনুরোধ মনোযোগ সহকারে শোনেন। এটি শ্রবণশক্তি এবং মনোযোগের প্রতীক।

ক্ষুদ্র চোখ: হাতির চোখ ছোট হলেও তা গভীর মনোযোগ ও তীক্ষ্ণ দৃষ্টির প্রতীক। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, গণেশ সব কিছু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং সূক্ষ্ম বিষয়গুলিও দেখতে পান।

বিশাল মস্তক ও ক্ষুদ্র শরীর: গণেশের বিশাল মাথাটি মহৎ চিন্তাভাবনা এবং বিশাল হৃদয়ের প্রতীক। এটি শেখায় যে, শরীর নয়, বরং মন ও প্রজ্ঞাই মানুষকে শ্রেষ্ঠ করে তোলে।

মানবজীবন ও সমাজে এর কী বার্তা রয়েছে?

দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: গণেশের গজমুখ আমাদের শেখায় যে, বাহ্যিক রূপের চেয়ে অভ্যন্তরীণ গুণাবলী বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষকে তার ভিতরের শক্তি ও প্রজ্ঞার দিকে মনোযোগ দিতে উৎসাহিত করে।

শ্রবণ ও মনোযোগ: গণেশের বড় কান মনে করিয়ে দেয় যে, ভাল শ্রোতা হওয়া এবং অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এটি পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক উন্নত করতে সাহায্য করে।

ক্ষমা ও সহনশীলতা: শিবের হাতে গণেশের শিরচ্ছেদের ঘটনা এবং পরে তাঁকে নতুন জীবন দেওয়ার ঘটনাটি ক্ষমা এবং সহনশীলতার বার্তা বহন করে। এটি শেখায় যে ভুল হলেও তা সংশোধন করে নতুন পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।

আত্মত্যাগের মাধ্যমে সৃষ্টি: এই কাহিনিটি আরও দেখায় যে, অনেক সময়ে ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে নতুন ও মহৎ কিছুর সৃষ্টি হয়। গণেশের শিরশ্ছেদ একটি সাধারণ মানব রূপের সমাপ্তি ছিল। যার ফলস্বরূপ তিনি এক শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাবান দেবতা রূপে আবির্ভূত হন।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement