Why do we say Ganpati Bappa Morya

গণেশ পুজোয় ‘গণপতি বাপ্পা মোরিয়া’ জয়ধ্বনি শুনেছেন, জানেন এর উৎপত্তি কী ভাবে?

গণেশ পুজোয় ‘গণপতি বাপ্পা মোরিয়া’ রব ওঠে অহরহ। কিন্তু এই কথার সঙ্গে জড়িয়ে আছে কোন অজানা গল্প?

Advertisement

তমোঘ্ন নস্কর

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৫ ১৫:২০
Share:

প্রতীকী চিত্র।

— প্রভু, এ অবোধ বালিকাকে দয়া কর। না তোমার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য নয়। এই বালিকার সুস্থ ভাবে বাঁচার জন্য তোমার আশীর্বাদের প্রয়োজন। তুমি একে দয়া কর।

Advertisement

তুমি দেখো আজও পথ চলতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে মাথা ফাটিয়েছে। এ পাহাড়ি পথও চলতে পারে না। সর্বজনে তুমি দয়া কর। তা হলে এ অবোধ শিশু কেন তোমার দয়া পাবে না…

আকুল হয়ে কেঁদে পড়েন মোরিয়া সাঁই। ধীরেধীরে খুলে যায় মন্দিরে দরজা। এক তীব্র আলোকচ্ছটায় ধাঁধিয়ে যায় সবার চোখ… অথচ বালিকা বলে ওঠে– আই, বাপা তোমরা কাঁদছ কেন! তোমাদের চোখে জল কেন?

Advertisement

আশ্চর্য হয়ে সবাই দেখেন, বালিকার সেই আজন্ম জুড়ে থাকা চোখের পাতা খুলে গিয়েছে। সেখানে টলটল করছে মণি গোলক। তাতে রৌদ্রের আভা ধরা আছে যেন।

আর সেই সাধক যিনি কাতর প্রার্থনা করেছিলেন আপন আরাধ্যের কাছে, তিনি এখনও কাঁদছেন। তবে সে কান্না আকুলতা বা অনুযোগের নয়, কৃতজ্ঞতার… মোরগাঁওয়ের মন্দির প্রাঙ্গণ মুখরিত হল প্রভু গণপতির নামে। জয় জয়কার হল প্রভু গণপতির।

তিনি গাণপত্য কুলের অন্যতম সাধক মোরিয়া সাঁই। তেরো শতকে কর্ণাটকের বিদরের এক ছোট্ট গ্রামে জন্মেছিলেন তিনি। জন্ম থেকেই তাঁর প্রাণ নিবেদিত ছিল শ্রী গণপতির চরণে। ধ্যান, জ্ঞান, শয়ন, স্বপন সবই তিনি। তাই বাবা-মাও পুত্রের নাম প্রভু ‘মোরেশ্বর’-এর কৃপাধন্য ‘মোরিয়া’ রেখেছিলেন।

দিন যায়। মোরিয়া বড় হন। দুর্গম পথ পায়ে হেঁটে যান মোরেগাঁওয়ের গণপতি মন্দিরে। তাঁর এই আশ্চর্য কৃচ্ছ্রসাধনকে মান্যতা দিয়েছিলেন প্রভু স্বয়ং। মোরিয়া সাঁই মন্দিরের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালে খুলে যেত সে দরজা। যেন স্বয়ং গণপতি গৃহস্বামী হয়ে স্বাগত জানাচ্ছেন তাঁকে।

তিনি এক অতি সাধারণ সাধু। ভিক্ষার অন্নই তাঁর মূল উপার্জন। অথচ পথের যত গরিব-দুঃখী, সবাইকে অন্নদান করতেন তিনি।

প্রভুর কৃপায় কোনও দিন অন্নের এতটুকু অভাব হয়নি। অন্ধ বাচ্চা মেয়েটিকে নিয়ে তার পিতামাতা এসে পড়েছিল তাঁর কাছে। কী আশ্চর্য! মন্দিরের চৌকাঠ স্পর্শ করা মাত্রই, দৃষ্টি ফিরে এল বালিকার। দিকে দিকে জয়জয়কার উঠল গণপতির।

***

মোরিয়ার সাধনে এতটাই তুষ্ট হয়েছিলেন গণপতি, যে সন্তানস্বরূপ হয়ে এসেছিলেন তাঁর কোলে। সে সন্তানের নাম চিন্তামণি।

বয়স হয়েছে মোরিয়া সাঁইয়ের। এখনও মোরেগাঁও যান। কিন্তু দুর্বল শরীরে তাঁর এই যাত্রা দেখে গণপতির ভীষণ কষ্ট হয়। তিনি স্বপ্ন দিলেন ভক্তকে– চিনচোয়াড়ে তুমি মন্দির গড়। আমি দর্শন দেব।

এক দিন নদীর জলে স্নানে নেমেছেন সাঁই। জল থেকে উঠে এলেন স্বয়ং গণপতি। সেই মূর্তি মাথায় করে নিয়ে এলেন মোরিয়া। স্থাপিত হল মঙ্গলমূর্তি ওয়ারা মন্দির।

***

সময় এল। গণপতির আহ্বান শুনতে পেলেন তিনি। ধ্যানে বসে সমৃদ্ধ হলেন মোরিয়া সাঁই। চোখের জলে পুত্র চিন্তামনি সেই সমাধিস্থলের উপরে গড়ে দিল মন্দির। সেই মন্দির আজও এক পবিত্র তীর্থভূমি– সঞ্জীবনী মন্দির।

কিন্তু গণপতি তাঁকে ভুললেন না। ঈশ্বরের নামের সঙ্গে এই উচ্চারিত হল প্রিয়তম ভক্তের নাম। আজও যখন সবাই জয়ধ্বনি দেয়, তাই বারে বারে বলে ‘গণপতি বাপ্পা মোরিয়া’, ভক্তের ভগবান অমর করে রাখলেন আপনার শিষ্যকে। সাধন বুঝি এটাই।

তথ্য ঋণ - কালচারগালি, সনাতন উইকি এবং শ্রী ব্রহ্মানন্দ স্বামী মহারাজ।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement