প্রতীকী চিত্র।
মানুষের দেহেই শক্তি সুপ্ত আছে। চোখে দেখা যায় না, কিন্তু তার জ্বালায় জেগে ওঠে আত্মা। সেই আগুনের নাম কুণ্ডলিনী। তিনি ইড়া-পিঙ্গলা-সুষুম্না খাঁচায় শুয়ে থাকা এক কুণ্ডলীকৃত সর্প।
তন্ত্রসাধকেরা যুগে যুগে এই নিদ্রিত শক্তিকে জাগাতে চেষ্টা করেছেন—নানা উপায়ে, নানা মন্ত্রে, নানা সাধনপীঠের নির্জনতায়। তবে শুধু জাগানোই নয়, এ শক্তিকে চালনা করতে হয়। এক জন সাধককে প্রথমে নিজের ভিতরের পরিসর বানাতে হয়। নির্জন স্থানে, যেখানে অশ্বত্থের ছায়ায় অশোক দোলে, নিমের তিক্ত গন্ধ মিশে যায় বেলের সুবাসে, চাঁপার শ্বেত সুবাসিত পাপড়ি পড়ে থাকে মাটিতে, সেখানেই আসন গড়েন তিনি। অর্থাৎ, পঞ্চবটির মধ্যে যে পঞ্চবৃক্ষ আছে, সেগুলি হল– অশ্বত্থ, অশোক, নিম, বেল এবং চাঁপা। পঞ্চমুণ্ডির বিভাগ আছে। যেমন, চণ্ডাল মুণ্ড, শৃগাল মুণ্ড (ধূর্ততা), নকুল মুণ্ড ( বিষহর এবং ক্ষিপ্রতা), বিষধর সর্পের মুণ্ড ( ক্রূরতা ও বিষ), হনুমান বা প্যাঁচার মুণ্ড ( বিচক্ষণতা)
আবার কোথাও চণ্ডালমুণ্ড দু’টি, শৃগাল মুণ্ড ১টি, বামন মুণ্ড ১টি, সর্প মুণ্ড একটি।
সেই নীরবতায় বসে সাধক ডুবে যান ধ্যানে। পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়, পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়, মন ও বুদ্ধির সব স্পন্দন নিয়ে জীবাত্মাকে নামাতে থাকেন অনাহত পদ্ম থেকে মূলাধার পদ্মে। ওঁ ধ্বনির গভীর স্পন্দন বাতাসে মিশে যায়। নাসিকার বায়ু টানেন তিনি। তাকে নামান মেরুদণ্ডের গোড়ায়, যেখানে মূলাধার। এই বায়ুতেই জ্বলে ওঠে কামবহ্নি– সূক্ষ্ম অথচ প্রগাঢ়। সেখানে নিদ্রিত কুণ্ডলিনী শক্তি যেন ধীরে ধীরে সাড়া দেয়, তার পাক খোলা শুরু হয়। এক সময় সে জেগে ওঠে। দেহ কেঁপে ওঠে, বক্ষ মাঝে বাজে এক অসম্ভব সুর, আর মানুষ তখন নিজের সীমা ছাড়িয়ে পৌঁছে যায় অনন্তের দোরগোড়ায়।
তথ্য ঋণ- কালী কথা- পত্রভারতী
সাধক পরমানন্দ গিরি মহারাজ, শ্রীরামপুর সিদ্ধেশ্বরী মন্দির
শাস্ত্রকার অরিজিৎ মজুমদার
সাধক শ্রী শুভ্র ভট্টাচার্য
কালী কথা - শিবশংকর ভারতী
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।