প্রতীকী চিত্র
মহালয়ার পূর্ববর্তী এক পক্ষকাল পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত। আদতে এটি কৃষ্ণপক্ষ। সময়কাল ১৫ দিন।
প্রতি বছর ভাদ্র মাসে পূর্ণিমার পরদিন অর্থাৎ কৃষ্ণ প্রতিপদ থেকে শুরু হয় এই পিতৃপক্ষ। চলে আশ্বিন মাসের অমাবস্যা তিথি পর্যন্ত, অর্থাৎ মহালয়া পর্যন্ত। এর পরে আরম্ভ হয় দেবীপক্ষ। মহালয়া তিথিটি পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষের সন্ধিক্ষণ।
আবহমান কাল থেকে মনে করা হয়, এই কৃষ্ণপক্ষ চলাকালীন পূর্বপুরুষেরা বংশের উত্তরপুরুষদের হাত থেকে জলগ্রহণের জন্য মর্ত্যে নেমে আসেন। কেবল নেমেই আসেন না, প্রচলিত বিশ্বাস মতে, পূর্বপুরুষদের আত্মা পিতৃলোক পরিত্যাগ করে এই সময়কালে উত্তরপুরুষদের গৃহে অবস্থান করেন। সেই কারণেই এই পক্ষের নাম পিতৃপক্ষ।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, কোনও জীবিত ব্যক্তির পূর্ববর্তী মৃত তিন পুরুষ পিতৃলোকে বাস করেন। স্বর্গলোক ও মর্ত্যলোকের মাঝে পিতৃলোকের অবস্থান। স্বয়ং যমরাজ এই লোকের অধিশ্বর। সদ্যমৃত ব্যক্তির আত্মাকে তিনিই মর্ত্য থেকে পিতৃলোকে পৌঁছে দেন। কারও মৃত্যু হলে তাঁর পূর্ববর্তী প্রজন্মের এক জনের আত্মা পিতৃলোক ত্যাগ করে স্বর্গলোকে গমনের অধিকার লাভ করে। আত্মার সঙ্গে তখন পরমাত্মার মিলন হয়।
পিতৃপক্ষের সঙ্গে মহাভারতেরও যোগ রয়েছে। মহাকাব্য অনুসারে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কর্ণের মৃত্যুর পরে তাঁর আত্মাকে স্বর্গে কেবল সোনা আর রত্ন খেতে দেওয়া হতো। দেবরাজ ইন্দ্রের কাছে এর কারণ জানতে চান কর্ণ। ইন্দ্র বলেন, ‘তুমি সারাজীবন সম্পদ দান করেছ, পিতৃপুরুষকে জল দাওনি। তাই তোমার জন্যে এই আহারের ব্যবস্থা।’ কর্ণ বলেন, তিনি পিতৃপুরুষের কথা জানতেন না। যখন বংশপরিচয় জানতে পারলেন, তার পরেই যুদ্ধে তাঁর মৃত্যু হল। পিতৃ তর্পণের সময় তিনি পাননি। দেবরাজ তাই কর্ণকে ১৫ দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দান করার অনুমতি দেন। ইন্দ্রের কথা মতো এক পক্ষকাল ধরে কর্ণ মর্ত্যে অবস্থান করে পিতৃপুরুষকে অন্নজল দান করেন। যে এক পক্ষকাল তিনি মর্ত্যে এসে পিতৃপুরুষকে জল দিলেন, সেই পক্ষটিই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
আবার জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, সূর্য কন্যারাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষের সূচনা হয়। সূর্য বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করলে পুনরায় পিতৃলোকে ফিরে যায় পূর্বপুরুষদের আত্মা। গোটা পক্ষকাল জুড়েই পিতৃপুরুষগণের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা যায়। শ্রেষ্ঠ তর্পণের তিথি হল পিতৃপক্ষের শেষ দিন, অর্থাৎ মহালয়া। এ দিনের তর্পণ শ্রাদ্ধের সমতুল। পিতৃপুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় জলদানের পাশাপাশি এই তিথিতে তিলও দান করা যায়। পিতৃপুরুষদের তুষ্ট করার পক্ষকালব্যাপী সময়ের নাম তাই পিতৃপক্ষ হওয়াই যথার্থ।