'আমি কি মা দুর্গা, যে দশভুজা হয়ে কাজ করব?' এমন কথা হামেশাই শোনা যায়। দুর্গা মানেই যেন একসঙ্গে একাধিক কাজ করার প্রতীক। দুর্গা শব্দটি শুনলেই ১০ হাতে ১০ রকমের অস্ত্র নিয়ে রণসাজে সুসজ্জিত এক দেবীর অবয়ব চোখের সামনে ভাসে। কিন্তু জানেন কি, দেবীর এই দশ হাত এবং তাতে থাকা দশ রকমের অস্ত্র আসলে এক একটি প্রতীক? এর সঙ্গে যোগ আছে বাস্তব জীবনেরও। কী ভাবে?
দেবীর হাতে থাকা চক্র আদতে দৃঢ়তা এবং সংহতির প্রতীক। একই সঙ্গে এই চক্রের মাধ্যমে বোঝানো হয় সমস্ত সৃষ্টির কেন্দ্রে রয়েছেন স্বয়ং দেবী দুর্গা। বিষ্ণু তাঁকে এই অস্ত্র দিয়েছিলেন।
ত্রিশূল: দেবাদিদেব মহাদেব তাঁর ত্রিশূল দেবী দুর্গাকে দিয়েছিলেন। ত্রিশূলের মাধ্যমে মানুষের ৩টি গুণকে বোঝানো হয় সত্ত্ব, তমঃ, রজঃ। এখানে সত্ত্ব মানে ধর্মজ্ঞান, তমঃ অথবা অন্ধকার দিক, এবং রজঃ মানে অহঙ্কার বোঝানো হয়েছে।
শঙ্খ: শঙ্খের ধ্বনিতে ত্রিলোকে থাকা সমস্ত অশুভ শক্তি দূর হয় বলে মনে করা হয়। দুর্গাকে শঙ্খ দিয়েছিলেন বরুণদেব।
বজ্র: ইন্দ্রদেব দুর্গাকে বজ্র দিয়েছিলেন, এর অর্থ সংকল্পের দৃঢ়তা। একই সঙ্গে সংহতির প্রতীকও বোঝানো হয় এর মাধ্যমে।
সাপ: পুরাণ মতে সর্প বা সাপকে শুদ্ধ চেতনার প্রতীক মনে করা হয়। নাগরাজ দেবীকে নাগপাশ দিয়েছিলেন।
গদা: দেবী দুর্গার হাতে থাকা গদা তাঁকে দিয়েছিলেন যমরাজ। এটিকে কালদণ্ডও বলা হয়ে থাকে। গদা আদতে আনুগত্য, ভালবাসার প্রতীক।
তীর-ধনুক: পবন দেব দুর্গাকে তীর ধনুক দিয়েছিলেন। এটি ইতিবাচক শক্তির প্রতীক।
তলোয়ার: তলোয়ারের ধারকে বুদ্ধির প্রতীক বলে মনে করা হয়। এর মাধ্যমে বৈষম্যকে দূর করা হয়। গণেশ দেবী দুর্গাকে তলোয়ার দিয়েছিলেন।
ঘণ্টা: শঙ্খের মতোই ঘণ্টা ধ্বনি সমস্ত অশুভকে বিনাশ করে বলে মনে করা হয়। ইন্দ্রের বাহন ঐরাবত দেবীকে এই অস্ত্র দিয়েছিলেন।
পদ্ম: ব্রহ্মা দুর্গাকে পদ্মফুল দান করেছিলেন। পদ্ম আদতে জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিক চেতনার বিকশিত হওয়ার প্রতীক। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)