শালুক ফুল
বাংলার সংস্কৃতিতে ‘শালুক ফুল’ চিরায়ত ঐতিহ্যের এক বাহক। এটি শুধু একটি জলজ ফুল নয়, বরং বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক বিশেষ প্রতীক। মা মনসার প্রতীক হিসেবে শালুক যেমন সাপের ভয় থেকে রক্ষা পাওয়ার আশ্বাস দেয়, তেমনই রান্নাপুজো ও বিশ্বকর্মা পুজোর সময়েও শালুক ফুলের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
রান্নাপুজোতে শালুক ফুল
রান্নাপুজো বাংলার গৃহস্থ জীবনের গভীর তাৎপর্যপূর্ণ একটি আচার। বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন মূলত এই রান্নাগুলি করে রাখা হয় এবং পুজোর দিন দুপুরে খাওয়া হয়। এই নিয়মকে ‘অরন্ধন’ও বলা হয়ে থাকে।
উনুনকে এখানে মা মনসার প্রতীক ধরা হয়। পুজোর আগের দিন উনুন পরিষ্কার করে গোবর-জল দিয়ে লেপে আলপনা দেওয়া হয়। তারপর ঘট স্থাপন করে শালুক ও শাপলার মালা দিয়ে উনুন সাজানো হয়। বিশ্বাস করা হয়, শালুক ফুল দিয়ে উনুন সাজালে পরিবারের মঙ্গল হয়, অশুভ শক্তি দূরে থাকে এবং সাপের উপদ্রব থেকে গৃহস্থ মুক্তি পায়। রান্নাপুজো মূলত পরিবারের কল্যাণ, অন্নের প্রাচুর্য ও শান্তির জন্য করা হয়, আর সেই পুজোতে শালুক ফুল এক অপরিহার্য উপাদান।
বিশ্বকর্মা পুজোতে শালুক ফুল
বাংলার আরও এক গুরুত্বপূর্ণ আচার হল বিশ্বকর্মা পুজো। এটি মূলত যন্ত্র, কাজ এবং সৃজনশীলতার দেবতার আরাধনা। গৃহস্থালি থেকে শুরু করে কল-কারখানা, সর্বত্রই এই পুজো করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, শালুক ফুলের পবিত্রতা বিশ্বকর্মা দেবতাকে সন্তুষ্ট করে এবং কাজের উন্নতি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনে। তাই, বিশ্বকর্মা পুজোর সাজসজ্জাতেও শালুক ফুলের ব্যবহার দেখা যায়।
শালুক ফুল কেবল মা মনসার প্রতীকেই সীমাবদ্ধ নয়। রান্নাপুজো ও বিশ্বকর্মা পুজোর মতো লোকজ ও সামাজিক আচারেও এর গভীর সংযোগ আছে। বাংলার গ্রামীণ সমাজে আজও শালুক ফুলের মালা পুজো-অর্চনায় ব্যবহার করা হয়। এটি শুধু একটি ফুল নয়, বরং বিশ্বাস, ভক্তি ও লোকঐতিহ্যের এক জাজ্বল্যমান প্রতীক।
এই প্ৰতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।