তাঁকে ঘিরে লক্ষ লক্ষ ভক্তদের ঢল। জ্বলে ওঠে আগুনের শিখা। জনসমুদ্রের মাঝে নেচে ওঠেন স্বয়ং তিনিও।
বামা কালী। শান্তিপুরের মূল আকর্ষণ। এই মূর্তির বিশেষত্ব হল শিবের বুকে তাঁর বাম পায়ের অবস্থান। সেই থেকেই নাম ‘বামা কালী’।
বিসর্জনের আগে তাঁর শোভাযাত্রার এই রোমহর্ষক দৃশ্য শিহরণ জাগায় দর্শনার্থীদের শরীরে।
একটি বাঁশের মাচায় করে দেবীর মূর্তি কাঁধে নিয়ে বয়ে চলেন ভক্তরা। পিছনে পিছনে আরও অগুন্তি ভক্তের সারি। সুবিশাল প্রতিমাকে নিয়ে কাঁধে বাঁশ থাকা অবস্থাতেই লাফিয়ে লাফিয়ে নাচের ভঙ্গি করেন ভক্তরা। দেখে মনে হয়, তাঁদের নেচে উঠছেন স্বয়ং দেবীও।
শান্তিপুরবাসীদের কাছে এই দৃশ্য অতি পরিচিত। কিন্তু এর নেপথ্যের ইতিহাস কী বলছে? কেন বিসর্জনের আগে এই ভাবে নাচানো হয় দেবীকে?
তথ্য ঘেঁটে জানা যায়, দেবী স্বয়ং ভরের মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, শান্তিপুরের দুই প্রাচীন এবং জনপ্রিয় কালী তথা দেবী সিদ্ধেশ্বরী এবং দেবী চাঁদুনী নাকি তাঁর সই।
নগর পরিক্রমার সময়ে দুই বন্ধুর দেখা না হলে হয়!
আর দুই বন্ধুর দেখা হওয়া মানেই আনন্দের আবহ। আর সেই আনন্দকেই এক সময়ে প্রকাশ করা হত নাচের মাধ্যমে।
সই প্রতিষ্ঠিত তাঁর মন্দিরে। তার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়তেই দুই দেবীকে মুখোমুখি রেখে শোভাযাত্রা চলাকালীনই নাচানো হত বামা কালীকে।
এমনকী যে ঠাকুরের থেকেই এই বামা কালীর উৎপত্তি, অর্থাৎ বোম্বাট কালীর সামনেও নেচে উঠতেন তিনি। ঠিক যেন নিজের সামনেই নিজে নাচছেন। সেই থেকেই শুরু এই রীতি।
শতাব্দী পেরিয়েও সেই রীতি এখনও অক্ষুণ্ণ রেখেছে শান্তিপুর।
পুজোর পরে অঞ্জলি হয়ে গেলে দেবীর মূর্তিকে বার করে নিয়ে আসা হয় মণ্ডপ থেকে। তখন থেকেই শুরু হয় বিসর্জনের প্রস্তুতি।
এর পরে ঘাট পর্যন্ত নিয়ে যেতে যেতে হয় নাচ।
শান্তিপুরে দেবীর আরাধনা কিন্তু টানা চার থেকে পাঁচ দিন চলে না। বরং পুজোর পর দিনই বিসর্জনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।