Dhanteras 2025

যমের হাত থেকে বাঁচাবে ধনলক্ষ্মী! ধনতেরসে পূজিত হন কোন কোন দেবতা?

‘ধনতেরস’-এর ‘ধন’ শব্দটিতে লক্ষ্মীর অবস্থান।

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৫ ১৭:১১
Share:

প্রতীকী চিত্র।

অমরত্বের জন্য চাই অমৃত। তার খোঁজে দেব-অসুরে সমুদ্র তোলপাড়!

Advertisement

প্রথমেই উঠল কালকূট। সেই বিষ কণ্ঠে নিয়ে নীলকণ্ঠ হলেন শিব।

মন্দার পর্বত মন্থনের ফলে মারা পড়ল পর্বতবাসী জীব, জন্তু, পাখি, গাছগাছালি এমনকি জলের প্রাণীরাও। এক সময়ে ক্ষীর সাগরের তল থেকে একে একে উঠে এল চন্দ্র, লক্ষ্মী, ধন্বন্তরি, কামধেনু, পারিজাত, মদিরা ও ১৪ মূল্যবান রত্ন।

Advertisement

সমুদ্র মন্থনকালে সমুদ্র থেকে দেবী লক্ষ্মী আবির্ভূত হয়েছিলেন কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে। সেই সূত্রেই এই তিথি 'ধন ত্রয়োদশী' নামে পরিচিত। আবার তাকে 'ধন্বন্তরি তিথি' নামেও ডাকা হয়।

‘ধনতেরস’-এর ‘ধন’ শব্দটিতে লক্ষ্মীর অবস্থান। দেবী নয়টি শক্তির আধার– বিভূতি, উন্নতি, কান্তি, হৃষ্টি, কীর্তি, সন্নতি, ব্যুষ্টি, উৎকৃষ্টি ও ঋদ্ধি।

ধনতেরসের দিন ঘরে ঘরে ধনলক্ষ্মীর পুজো হয়। পূজিত হন ধন্বন্তরি এবং কুবের দেবতাও। ধন্বন্তরির উপাসনায় রোগ-মারীর প্রকোপ থেকে রক্ষা পায় মানুষ। দিনটিকে বলা হয় ‘বসুবর্ষ’ বা ‘বসুবরস’।

বসু বরস থেকে শুরু হয় দীপাবলি উৎসব। ‘বসু’ অর্থে ধন, রত্ন, বৃদ্ধৌষধি, সোনা, জল, গাছ, আগুন, সূর্য।

কুবের ধনসম্পদের দেবতা। ধনসম্পদ রক্ষাও করেন। যক্ষপতি, এবং দশ দিকের অধীশ্বরও তিনিই।

এই দিনে সবৎস গো পুজোর প্রচলন আছে। বৈদিক যুগে গো ছিল সম্পদ, আবার দেবতাও।

অশুভকে দূর করে যাতে শুভের আগমন হয়, তার জন্য এ দিন দীপমালায় সাজানো হয় বাড়ি। রাতভর ঘরে আলো জ্বলে সম্পদের দেবী আর স্বাস্থ্যের দেবতার জন্য।

ধনতেরস বা ধন ত্রয়োদশীর মহিমা নিয়ে আরও এক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে।

এই গল্পের সঙ্গে মিল পাওয়া যায় মনসামঙ্গলের বেহুলা-লখীন্দরের কাহিনির।

এক সময় হেমনক নামে এক রাজা ছিলেন। তিনি আবার ‘হিম’ নামেও পরিচিত। রাজার এক ছেলে। জন্মের পরে ছেলের কোষ্ঠী বিচার করে পণ্ডিতেরা বললেন- রাজপুত্র তার বিয়ের চতুর্থ রাতেই সাপের কামড়ে মারা যাবেন।

ছেলে দেখতে দেখতে বিয়ের যোগ্য হয়ে উঠল। কিন্তু বিয়ের কথা ভাবলেই তার মৃত্যুযোগ আতঙ্কগ্রস্ত করে তোলে রাজাকে। শেষ পর্যন্ত রাজপুত্রের বিয়ের জন্য কন্যা স্থির করলেন তিনি।

তবে বিয়ের আগে মেয়ের বাড়িতে রাজজ্যোতিষীর কথা জানিয়েই ছেলের বিয়ে দিলেন রাজা।

বিয়ের চতুর্থ রাতে সারারাত জেগে থাকল নতুন বউ। রাজপুত্রকেও দু’চোখের পাতা এক করতে দিল না সে। যত বারই স্বামীর ঘুম আসে, তত বারই জাগিয়ে দেয়!

রাজপুত্রকে কী ভাবে সে মৃত্যুর গ্রাস থেকে রক্ষা করবে?

সদ্য স্বামীগৃহে আসা বধূটি ঘরের সামনে সমস্ত গহনা, ধনরত্ন, মোহর স্তূপ করে রেখে তার চার দিকে প্রদীপ জ্বালিয়ে দিল।

মণি মানিক্যের গায়ে আলো পড়ে ঝলমলিয়ে উঠল চার পাশ।

অনেক রাতে সাপের বেশে হানা দিল যম। কিন্তু দরজায় আসতে না আসতেই হীরে জহরতের স্তূপ থেকে ঠিকরে আসা আলোয় চোখ গেল ঝলসে। যম আর ঘরে প্রবেশ করতে পারলেন না। অপেক্ষা করতে লাগলেন দ্বারেই। সোনার স্তূপের ও পারেই রাজপুত্র আর তার স্ত্রী।

এ ভাবেই রাত পার। সময় যে যমেরও অধীন নয়! সময়ের কাঁটা পেরিয়ে যেতেই বিদায় নিতে হল যমকে। প্রাণ বেঁচে গেল রাজপুত্রের। বুদ্ধির এমন বলের জন্য যুবরানীকে ধন্য ধন্য করল রাজ্যবাসী।

লোকবিশ্বাস বলে, কার্তিক ত্রয়োদশীর সন্ধ্যেয় যমের উদ্দেশে প্রদীপ দিলে আর মৃত্যুভয় থাকে না। পদ্মপুরাণ এবং স্কন্দপুরাণেও এর উল্লেখ আছে।

ধনতেরসের সূচনা হয় কার্তিক মাসের কৃষ্ণা একাদশীর দিন। পাঁচ দিন ধরে চলে উৎসব। এই পাঁচ রাত্রের পূর্বার্ধে দেবতা, ব্রাহ্মণ, হাতি, ঘোড়া এবং শ্রেষ্ঠদের পুজো ও আরতি করা হয়।

এ দিন সোনা, রুপো, নতুন বাসনপত্র, তামা ও পিতলের সামগ্রী, ঝাঁটা, এবং লবণ কেনা শুভ বলে মনে করে মানুষ। সে সব সমৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, ও সৌভাগ্যের প্রতীক এবং দেবী লক্ষ্মী ও কুবেরের আশীর্বাদ নিয়ে আসে বলে বিশ্বাস করা হয়।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement