আলোর উৎসব দীপাবলি চলে পাঁচ দিন ধরে, তারই অঙ্গ হল এই ধনতেরস। কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে অর্থাৎ ১৩তম দিনে হয় ধনতেরস। যা ধনত্রয়োদশী অথবা ধন্বন্তরি ত্রয়োদশী নামেও পরিচিত।
আবার অনেকেই একে ধন্বন্তরি জয়ন্তী বা ধনবত্রী ত্রয়োদশী বলেন।
কেন দিনটি ধন্বন্তরি ত্রয়োদশী?
ধন্বন্তরি ত্রয়োদশীতে পূজিত হন ধন্বন্তরি। ধন্বন্তরি হলেন দেববৈদ্য। ভেষজ চিকিৎসার জ্ঞানের স্রষ্টা। তিনি সুদর্শন, চতুর্ভুজ। তাঁর চার হাতে শঙ্খ, চক্র, কলস, ও জোঁক দেখা যায়। আবার কোথাও তিনি শঙ্খ, অমৃত, ঔষধী বৃক্ষ ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্র ধারণ করেন।
মূলত ধন্বন্তরিকে স্মরণ করে ভূত চতুর্দশীতে ১৪ শাক খাওয়া হয়। তার পরের দিন অনেকে যমের পুজো করেন।
জরা, ব্যাধি ও মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল জীবনের কামনায় পূজিত হন ধন্বন্তরি এবং যম।
কার্তিক ত্রয়োদশী তিথিতেই সমুদ্র মন্থনে জন্ম নিয়েছিলেন ধন্বন্তরি। ধন্বন্তরি বিষ্ণুরই অবতার। মর্ত্যে বিজ্ঞান ও ঔষধির বিস্তারের জন্য ধন্বন্তরীর রূপ নেন বিষ্ণু। এই মতে, ধন্বন্তরির আবির্ভাব তিথিই হল ধনতেরস।
অমৃতের জন্য সমুদ্রমন্থনের সময় ক্ষীর সাগরে প্রথমে অমৃত কলস হাতে আবির্ভূত হন ধন্বন্তরি। বিষ্ণু তাঁকে বলেন - "জল থেকে জন্ম নিয়েছ। তাই তুমি অব্জ।" অব্জ অর্থাৎ জলজাত।
ধন্বন্তরি তখন বিষ্ণুর কাছে তাঁর যজ্ঞভাগ ও স্থান নির্ধারণ করার আর্জি জানান।
বাস্তবিক অবস্থান পর্যালোচনা করার পর মহাবিষ্ণু তাঁকে জানান, "যজ্ঞের বিভাজন ইতিমধ্যেই দিতিপুত্রগণের পাশাপাশি সুরগণও সম্পন্ন করেছেন। হোম প্রভৃতির যথাযথ কার্যকারিতা মহর্ষিগণ বেদে নির্ধারণ করেছেন। তুমি বেদের পরে জন্মেছ। তাই যজ্ঞে আবাহনের উপযুক্ত তোমার কোনও মন্ত্র নেই।
তিনি ধন্বন্তরিকে দ্বাপর যুগে দ্বিতীয় অবতার গ্রহণের বর দেন।
এই জন্মে মাতৃগর্ভে থাকাকালীন তিনি অণিমাদি বিবিধ সিদ্ধি অর্জন এবং দেব দেবত্ব লাভ করবেন। আয়ুর্বেদের প্রচলন হবে তাঁর দ্বারাই। ব্রাহ্মণ, চতুর্মন্ত্র, ঘি ও গব্য দ্বারা তিনি পূজিত হবেন।
দ্বাপর যুগে কাশীরাজ দীর্ঘতপা পুত্র কামনায় বৈদ্য ধন্বন্তরির আরাধনা করেন। কাশীরাজের সন্তানরূপে তিনি অবতরণে রাজি হন।
ধন্বন্তরি এক মহান রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। তাঁকে বলা হয় 'সর্বরোগহারী'। ঋষি ভরদ্বাজ তাঁকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসার পাঠ শিক্ষা দান করেন তথা ঔষধিবিদ্যার আদি জনক করে তোলেন। ধন্বন্তরি চিকিৎসাবিদ্যাজ্ঞানের আটটি ক্ষেত্রে শ্রেণিবিন্যাস তৈরি করে শিষ্যদের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেন।
মহারাষ্ট্রের রত্নগিরি জেলার দাপোলিতে একটি ধন্বন্তরি মন্দির রয়েছে।
কেরালা ও তামিলনাড়ু ধন্বন্তরির একাধিক মন্দির রয়েছে। সেখানে আয়ুর্বেদের চর্চা ও পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়।
২০১৬ সাল থেকে ধন্বন্তরির আবির্ভাব তিথি ভারতে জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস হিসেবেও পালিত হয়ে আসছে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)