ধনতেরসের দিন ধনলক্ষ্মীর সঙ্গে পূজিত হন কুবের দেবতা। ধনসম্পদের দেবতা কুবেরের আরাধনা করলে আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ধনতেরস আর শারদ পূর্ণিমা এই দুই তিথিতে কুবের দেবের পুজো হয়। শারদ পূর্ণিমা দিনটি কুবের দেবতার জন্মতিথি হিসেবে পালিত হয়।
কুবের ধনসম্পদ রক্ষাও করেন। তিনি আবার যক্ষদের রাজা যক্ষপতি। দশ দিকের অধীশ্বরও তিনিই।
কুবের দেবতাকে ঘিরে পুরাণ প্রচলিত কাহিনিও বেশ অন্য রকম। দেবতা হলেও তিনি দেব সমান নন, আবার অপদেবতাও নন। বহু নাম তাঁর, কিন্তু একটি নাম ছাড়া বাকি সবই থেকে গিয়েছে আড়ালে।
বিশ্রভা ও ইলাবিলার সন্তান কুবের। ইলাবিলার পুত্র হওয়ায় অপর নাম ঐলবিল। পিতা বিশ্রবার নামানুসারে তিনি বৈশ্রবণ।
কিন্তু কুৎসিত দর্শন হওয়ার কারণে ধনসম্পদের দেবতার নাম হয়ে যায় 'কুবের'। কুবেরের তিন পা ও আটটি দাঁত।
দু হাজার বছর ধরে তপস্যা করে ব্রহ্মাকে তুষ্ট করেন তিনি। তাঁর কঠোর কৃচ্ছ সাধনে ব্রহ্মা সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে দেবতাদের সমান মর্যাদার এক পুষ্পক রথ প্রদান করেন।
ব্রহ্মার কাছে দেব মর্যাদা পেলেও যক্ষপতি অপদেবতা; তাই দেবতাদের সঙ্গে সমকক্ষ নন। আবার অপদেবতার সঙ্গেও এক রাজ্যে অধিষ্ঠান করতে পারেন না।
কুবেরের কোনও আবাসস্থান ছিল না। তাই ব্রহ্মা কুবের পিতাকে তাঁর জন্য পৃথক বাস নির্মাণের অনুরোধ করেন।
বিশ্রবা বিশ্বকর্মা কর্তৃক নির্মিত ত্রিকূটশিখরস্থ লঙ্কাপুরীতে পুত্র কুবেরের বাসস্থান স্থির করে দেন।
রাবণ লঙ্কাপুরী দখল করতে ইচ্ছা প্রকাশ করলে, পিতার উপদেশে লঙ্কা পরিত্যাগ করে কৈলাস গমন করেন।
কুবের লঙ্কায় এক বার রুদ্রাণীকে দর্শন করেন। তার ফলে কুবেরে ডান চোখ পুড়ে যায় ও বাম চোখ পিঙ্গলবর্ণ ধারণ করে। সেই থেকে ধনের দেবতা 'এক পিঙ্গল' নামে খ্যাত হন।
কৈলাসে শিবের সাধনায় মগ্ন হন কুবের। বহু বছরের সাধনায় মহাদেব সন্তুষ্ট করে তাঁর কৃপা পান। মহাদেবের সঙ্গে সখ্য হয় তাঁর। সেই থেকে কুবেরের আর এক নাম হয় 'ত্র্যাম্বকসখা'।
কুবেরের স্ত্রীর নাম ছিল আহুতি। আহুতির গর্ভে তাঁর দুই পুত্র ও এক কন্যা জন্মগ্রহণ করেছিল। দুই পুত্রের নাম ছিল- নলকুবর ও মণিগ্রীব। কন্যার নাম ছিল- মীনাক্ষী। কুবের সপরিবারে কৈলাসে থাকতেন। তাঁর রাজধানীর নাম ছিল অলকা।
রাবণ মহাশক্তিশালী ও অত্যাচারী হয়ে উঠলে, কুবের দূত মুখে রাবণকে দুষ্কর্ম থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতে রাবণ ক্ষুব্ধ হয়ে কুবেরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই যুদ্ধে দশাননের কাছে কুবেরের পরাজয় ঘটে। রাবণ তাঁর পুষ্পক রথটি দখল করে নেন।
রাবণ বধের জন্য রামকে সহায়তার জন্য ব্রহ্মা বিভিন্ন দেব, গন্ধর্ব, যক্ষ প্রমুখদেরকে বানর সৃষ্টি করার আদেশ করেন। এই সূত্রে কুবের একটি বানর সৃষ্টি করেন। যক্ষদেবের বানর পুত্র 'গন্ধমাদন'।
মধ্যপ্রদেশে ধপেশ্বর মহাদেব মন্দিরে পূজিত হন কুবের। গুজরাটে নর্মদা তীরে অবস্থিত কুবের ভান্ডারি মন্দির। কথিত, ২৫০০ বছর আগে মহাদেব স্বয়ং এই মন্দির নির্মাণ করেন। কুবের ভান্ডারি মন্দিরে প্রতি বছর ভান্ডারা অনুষ্ঠিত হয়, এই অনুষ্ঠান পৃথিবী বিখ্যাত। ভক্তদের বিশ্বাস পর পর পাঁচ দিন অমাবস্যা দিনে এই মন্দির এসে যদি কুবের ভান্ডারির দর্শন করলে সকল ইচ্ছা পূরণ হবে। তাই এই মন্দির দর্শন করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ আসেন। প্রাচীন এই মন্দিরটি গুজরাটের রাজধানী গান্ধীনগর থেকে ভাদোদরা জেলার দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)