History of Mahishasuramardini

‘মহিষাসুরমর্দিনী’র অনুপ্রেরণা বাসন্তীপুজো উপলক্ষে সৃষ্ট ‘বসন্তেশ্বরী’ই

পৃথিবীর বেতার ইতিহাসে বিরলতম নজিরের নাম ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। আজও মহালয়ার ভোর এই গীতিআলেখ্য ছাড়া অসম্পূর্ণ। এমন একটি অনুষ্ঠান করার ভাবনা জন্ম নিল কী ভাবে? ধীরে ধীরে কেমন করে নাম বদলে, সম্প্রচারের দিন বদলে মহালয়া আর ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ সমার্থক হয়ে উঠল?

Advertisement

সৌভিক রায়

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:৪৭
Share:

প্রতীকী চিত্র

শিউলি, ছাতিম, নতুন জামার গন্ধ দেবী দুর্গার আগমনের আবহ তৈরি করে। কিন্তু বাঙালির দুর্গাপুজো আসে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উচ্চারণে। মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বেজে উঠতেই বাংলার আকাশ, বাতাস যেন বলে ওঠে ‘মা আসছে...’। দীর্ঘ নয় দশকেরও বেশি সময় ধরে সম্প্রচারিত হওয়া ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র জনপ্রিয়তায় এক ইঞ্চিও ভাটা পড়েনি। পৃথিবীর বেতার ইতিহাসে এমন নজির আর দুটো আছে বলে মনে হয় না!

Advertisement

কী ভাবে শুরু হয়েছিল ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র পথচলা?

ভারতীয় বেতারে সঙ্গীত-নির্ভর অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা ছিল সর্বাধিক। ১৯৩০ সাল থেকে চলত প্রভাতী অনুষ্ঠান। নতুন কিছু করার তাগিদ থেকে তৈরি হয় ‘বসন্তেশ্বরী’ নামের উপস্থাপনা। বসন্তকাল হল দেবী বাসন্তীর আরাধনার সময়। সেই উপলক্ষে শ্রীশ্রী মার্কণ্ডেয় চণ্ডীর আখ্যানকে উপজীব্য করে ১৯৩২ সালে বাণীকুমার রচনা করেন ‘বসন্তেশ্বরী’। ১৯৩২ সালের মার্চ মাসে, বাংলার ১৩৩৮ সনে চৈত্রর শুক্ল অষ্টমীর সকালে বাসন্তী আর অন্নপূর্ণা পুজোর সন্ধিক্ষণে সম্প্রচারিত হয় ‘বসন্তেশ্বরী’। রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গীত পরিচালনা, পণ্ডিত হরিশ্চন্দ্র বালী, পঙ্কজকুমার মল্লিকদের সুর এবং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ও বাণীকুমারের কণ্ঠের দৌলতে ‘বসন্তেশ্বরী’ বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

Advertisement

‘বসন্তেশ্বরী’র পদাঙ্ক অনুসরণ করে শারদীয় দুর্গাপুজোর সময়তেও একটা অনুষ্ঠান করার ভাবনা শুরু হয় তার পরেই। ১৯৩২ সালে (১৩৩৯ বঙ্গাব্দ) ষষ্ঠীর ভোরে দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেজে ওঠে এক গীতিআলেখ্য। তখনও অনুষ্ঠানের নামকরণ করা হয়নি। ‘বিশেষ প্রত্যুষ অনুষ্ঠান’ হিসেবে হয় সম্প্রচার। ১৯৩৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মহালয়া তিথির সকালে উপস্থাপনাটির পরিমার্জিত রূপ সম্প্রচারিত হয়।

১৯৩৬-র ২১ অক্টোবর সকাল ছ’টায় কলকাতা-ক কেন্দ্র থেকে বেজে ওঠে ‘এক বিশেষ প্রভাতী অনুষ্ঠান’। দিনটি ছিল ষষ্ঠী। নব্বই মিনিটের অনুষ্ঠানটির নাম ছিল ‘মহিষাসুর বধ’। পরের বছর, ১৯৩৭ থেকে নতুন নাম হয় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। দু’ঘণ্টা এগিয়ে এনে ভোর চারটে থেকে শুরু হয় সম্প্রচার। ওই বছর থেকে পাকাপাকি ভাবে মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বাজানো শুরু হয়।

তিন কিংবদন্তি বাণীকুমার, পঙ্কজকুমার মল্লিক ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এবং আরও শিল্পীরা যুগে যুগে বাঙালির পুজোর সুর বেঁধে দিয়ে চলেছেন ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র মাধ্যমে। আজও মহালয়ার ভোরে রেডিয়োর সামনে বসে থাকে বাঙালি। পিতৃপুরুষদের শ্রদ্ধা জানানোর তিথিকে নতুন পরিচয় দিয়েছে এই অনুষ্ঠান।

১৯৭৬ সালে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’কে বাতিল করে বাজানো হয় সিনেমা তারকাদের নিয়ে তৈরি ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম্’। মানুষ প্রত্যাখান করে। ‘স্টারডম’ হেরে যায় ঐতিহ্যের কাছে। সেই বছর ষষ্ঠীতে বেতারে ফের বেজে ওঠে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কণ্ঠে ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে...’ না শুনলে যে বাঙালির পুজো আসে না!

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement