মোট ৫১ সতীপীঠ রয়েছে। তার মধ্যে ১৩টি আবার অবস্থিত খোদ বাংলাতেই। কী কী সেগুলি, বা কী এই সতীপীঠ চলুন জেনে নেওয়া যাক।
রাজা দক্ষের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে দেবাদিদেব মহাদেবকে বিয়ে করেন সতী। তাতেই রুষ্ট হন তিনি। এর প্রতিশোধ নিতে একটি যজ্ঞের আয়োজন করেন রাজা দক্ষ। সেখানে সকল দেব দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, জামাই শিবকে আমন্ত্রণ জানান না দক্ষ।
স্বামীর এই অপমান মেনে নিতে পারেন না সতী। এই যজ্ঞে গিয়ে যথাযথ সম্মানও পাননি খোদ দেবী। অপমান সহ্য করতে না পেরে যজ্ঞের আগুনে নিজেকে আহুতি দেন সতী।
স্ত্রীর মৃত্যু সহ্য করতে পারেন না মহাদেব। সতীর দেহ নিয়ে শুরু করেন তাণ্ডব নৃত্য। তাঁর নাচে পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার জোগাড় হলে, তাঁকে শান্ত করতে সুদর্শন চক্র পাঠান বিষ্ণু। তাতেই সতীর দেহ ৫১টি খণ্ড হয়ে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে পড়ে, সেই স্থানগুলিকেই সতীপীঠ বলে মানা হয়। হিন্দু ধর্মে মনে করা হয় এই স্থানগুলি অত্যন্ত পবিত্র। ভারত তো বটেই, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কাতেও আছে সতীপীঠ। তবে তার মধ্যে ১৩টি রয়েছে বাংলায়।
বীরভূমের অট্টহাসে মনে করা হয় দেবীর ঠোঁট পড়েছিল। এখানে দেবী দুর্গা ফুল্লরা নামে পূজিত হন।
কঙ্কালীতলা কোপাই নদীর তীরে অবস্থিত। বোলপুর স্টেশন থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরেই এটি অবস্থিত। মনে করা হয় এখানে দেবীর কঙ্কাল পড়েছিল।
বক্রেশ্বরে দেবীর দুই ভ্রু মাঝের অংশ পড়েছিল বলে মনে করা হয়। বীরভূমের দুবরাজপুরের দুবরাজপুর স্টেশন থেকে মাত্র ১১ কিলোমিটার দূরে এই সতীপীঠ অবস্থিত। এখানে দেবীর নাম মহিষমর্দিনী।
সাঁইথিয়া স্টেশনের কাছে অবস্থিত নন্দীপুরে দেবীর কণ্ঠহার পড়েছিল বলে মনে করা হয়। এখানে দেবী নন্দিনী নামে পূজিত হন।
সতীর নলা পড়েছিল নলহাটিতে। এখানে কালিকা রূপে পূজিত হন তিনি।
বর্ধমানের অজয় নদীর ধারে কেতুগ্রামে অবস্থিত বহুলা। এখানে দেবীর বাম বাহু পড়েছিল, তাই দেবীর নাম বহুলা।
ক্ষীরগ্রামে অবস্থিত যুগাদ্যা যেখানে দেবুর পায়ের আঙুল পড়েছিল।
গুসকরা স্টেশন থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত উজানী। শোনা যায় এখানে নাকি দেবীর ডান কনুই পড়েছিল। দেবী এখানে চণ্ডিকা রূপে পূজিত হন।
কলকাতায় রয়েছে কালীঘাট। সতীর ডান পায়ের পাতা এখানে পড়েছিল বলে মনে করা হয়। কালিকা রূপে পূজিত হন এখানে দেবী।
দেবীর বাঁ পা পড়েছিল জলপাইগুড়ির শালবাড়ি গ্রামে। সেখানে দেবী ভ্রামরী নামে পুজো পান।
তমলুকের বিভাসে রয়েছে আরেক সতীপীঠ। সেখানে দেবী ভীমরূপা।
দেবীর কিরীট পড়েছিল মুর্শিদাবাদের কিরীটকোণায়। বিমলা নাম এখানে দেবীর।
আর বাংলার তেরোতম সতীপীঠ হল রত্নাবলী। হুগলির খানাকুলের কৃষ্ণনগরে রত্নাকর নদীর তীরে অবস্থিত এটি। দেবীর একটি কাঁধ এখানে পড়ে। কুমারী নামে পূজিত হন দেবী এখানে। ( এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।