শারদ উৎসব শেষ হতেই আগমন ঘটে দেবী কালীর। চারপাশে জ্বলে ওঠে আলোর প্রদীপ, বাতাসে ভাসে উলুধ্বনি আর শঙ্খের শব্দ। কিন্তু এই আলোর উৎসবের মাঝেও মৈনাক ক্লাব স্মরণ করিয়ে দিয়েছে এক যুবকের আত্মত্যাগের কাহিনী।
তাঁদের এই বছরের থিম— ‘পরাক্রম’, যার অর্থ— যে ভয়কে জয় করতে পারে।
এই পরাক্রমের প্রতিচ্ছবি হিসেবে মণ্ডপে মূর্ত হয়ে উঠেছেন সেই বীর বিপ্লবী, যাঁর নাম ইতিহাসের পাতায় সোনার অক্ষরে লেখা— শহিদ ক্ষুদিরাম বসু।
মণ্ডপের ভিতরে ঢুকলেই দর্শক দেখতে পাবেন ক্ষুদিরামের ছোটবেলা থেকে শুরু করে ফাঁসির মঞ্চ পর্যন্ত তাঁর সমগ্র জীবন।
কেমন ছিল তাঁর কৈশোর, দেশমাতৃকার প্রতি তাঁর ভালবাসা কী ভাবে তাঁকে বিপ্লবের পথে টেনে এনেছিল, প্রতিটি ধাপ যেন গল্পের মতো করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
১৯০৮ সালে বিহারের মজঃফরপুরে প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস কিংসফোর্ডকে হত্যার যে সাহসী প্রচেষ্টা করেছিলেন ক্ষুদিরাম, সেই ঘটনা আজও রোমাঞ্চ জাগায়।
যদিও সেই প্রচেষ্টা সফল হয়নি, তবুও মজঃফরপুর ষড়যন্ত্র মামলায় ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকীর ফাঁসির রায়, এই দুই তরুণকে ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বকনিষ্ঠ শহিদ করে তোলে।
ক্ষুদিরামের এই বলিদান ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইতে আরও বহু মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
আজও তিনি তারুণ্যের সাহসের প্রতীক হিসাবে অমর হয়ে রয়েছেন। এই মণ্ডপ যেন সেই সাহসিকতাকেই প্রণাম জানাচ্ছে।
কালী প্রতিমার সজ্জাতেও রয়েছে বিশেষ বার্তা। এখানে মাতৃপ্রতিমা সাদা শাড়ি ও কমলা রঙের উত্তরীয় পরিহিতা।
পেছনের চালচিত্রে ছবিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা মুহূর্ত। দেবী কালী এখানে শুধু শক্তির আধার নন, তিনি যেন সেই জননী, যাঁর সন্তানেরা দেশের জন্য নির্ভয়ে জীবন উৎসর্গ করতে জানে।
এই উৎসব যেন একইসঙ্গে ভক্তির, আলোর আর পরাক্রমের এক মন ছুঁয়ে যাওয়া মেলবন্ধন। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।