পুজোর সময় কম বেশি সকলেরই এক দিন বরাদ্দ থাকে দক্ষিণ কলকাতার ঠাকুর দেখার জন্য। আর দক্ষিণ কলকাতা, আরও ভাল করে বললে বেহালার দিকে এলে বেহালা নূতন দলের ঠাকুর না দেখে ফিরে যান এমন মানুষ কমই আছে। লম্বা লাইন পড়ে এই ক্লাবের ঠাকুর দেখার জন্য।
এ বার এই ক্লাবের হীরক জয়ন্তী বর্ষ। ৬০ তম বছরে এসে নূতন দলের ভাবনা ‘শিবানী ধাম’। হ্যাঁ, দুর্গার আরেক নাম শিবানী। আর ‘শিবানী ধামে’ই এ বার আরাধনা হবে দেবীর। সঙ্গে থাকবে বুন্দেলখন্ডের ছোঁয়া।
বেহালা নূতন দলের এ বারের থিম ভাবনা রণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অমর সরকার এবং সঞ্জয় ভট্টাচার্যের। এই ক্লাবের প্যান্ডেল এ বার কী ভাবে সেজে উঠছে, কী কী চমক থাকছে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আনন্দবাজার ডট কমকে শিল্পী রণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তাঁদের এ বারের ভাবনা এক কাল্পনিক গল্প, যেখানে ফুটে উঠবে চার-পাঁচশ বছর আগে নির্মিত এক মন্দিরের কথা।
রণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কোনও এক সময়, চার-পাঁচশ বছর আগে বুন্দেলখন্ড থেকে কিছু মানুষ এখানে এসেছিলেন, এসে আমাদের উত্তরবঙ্গের মতো কোনও জায়গায় বসতি স্থাপন করেন। তখন এ ভাবে পশ্চিমবঙ্গ ছিল না, বাংলা-বিহার-ওড়িশা মিলে এক সঙ্গে সমস্ত কিছু ছিল। সেখানে দুই-তিন প্রজন্ম ধরে ওঁরা এই মন্দিরটি তৈরি করেছিলেন।”
তিনি এও জানান, “যিনি আরম্ভ করেছিলেন, তিনি শেষ করে যেতে পারেননি। যিনি বুন্দেলখন্ড থেকে এখানে এসে এটি নির্মাণ করা শুরু করেন, তাঁর স্ত্রী শিব ভক্ত ছিলেন। স্বামীকে অনুরোধ করেন শিবের মূর্তি স্থাপন করার জন্য। সেই ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে এই মন্দিরটি শেষ করেন। তাঁর আবার এক বান্ধবী নর্তকী ছিলেন, যিনি দুর্গার ভক্ত, তাঁর অনুরোধে সেই ব্যক্তি শিবানীর মন্দির তৈরি করেন। সেই থেকে এই মন্দিরের নাম হয় ‘শিবানী ধাম’, সেখানকার মানুষ এটিকে এই নামেই চেনে।”
রণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, একটা সময় সেই পরিবার এখান থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, কিন্তু এই মন্দির এবং সেখানে দেবীর আরাধনা চলতে থাকে।
জানা গিয়েছে এ বার বেহালা নূতন দলের অন্যতম চমক হল লাইভ পারফরমেন্স। ফলে দর্শনার্থীরা এসে এখানে দেবী দর্শনের পাশাপাশি অনুষ্ঠানও দেখতে পারবেন।
জানা গিয়েছে এই ‘শিবানী ধাম’ তৈরি করতে ব্যবহৃত হচ্ছে বাঁশ, পাইপ, গ্লাস ফাইবার, বিভিন্ন ধরনের রং, ইত্যাদি। বর্তমানে জোরকদমে মণ্ডপসজ্জার কাজ চলছে।
তা হলে আর কী, এ বার দক্ষিণ কলকাতা এলে এখানে কিন্তু একবার ঢুঁ মেরে যেতেই পারেন। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।