কালীপুজো প্রায় দোরগোড়ায় এসেই গেল। আকাশ জুড়ে এখন শ্যামার আগমনীর সুর, আর মাটির বুকে জেগে উঠছে সেই সব গল্প, যা লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেও জ্যান্ত। তেমনই এক নিবিড় রহস্যের ঠিকানা উত্তর কলকাতার তারাশঙ্করী পীঠ।
উত্তর কলকাতার এই মন্দিরটি যেন তন্ত্র সাধনার এক গুপ্ত দরজা। বাইরের কোলাহল সেখানে পৌঁছায় না, শুধু এক গা ছমছমে নিস্তব্ধতা আর অব্যক্ত রহস্যের আনাগোনা থাকে।
মন্দিরে মা পুজো পান ‘তারাশঙ্করী’ রূপে। এঁর রূপ ভয়ঙ্কর, তবে ভক্তের কাছে তিনি করুণাময়ী।
এই মন্দিরের প্রতিটি কোণে লুকিয়ে আছে বহু গোপন কথা।
গর্ভগৃহের ভেতরে দেবীর সামনে চোখে পড়ে অজস্র নরমুণ্ড ও হাড়। এই পরিবেশটিই বলে দেয়— এখানে সাধারণ ভক্তির পাশে তন্ত্র সাধনা তার পূর্ণ মহিমায় বিরাজ করে।
এই মন্দিরে চলে বেশ কিছু পুজোর যার দৃশ্য দর্শনার্থীদের জন্য নয়, কারণ মন্দিরের সামনে উঠেছে এক পুরু দেওয়াল।
বলা হয়, কিছু গোপন আচার সাধারণ মানুষের দেখা নিষিদ্ধ।
আরও এক বিস্ময়: মায়ের ভোগ এবং সন্ধ্যার আরতি— সবই হয় একটি জ্বলন্ত চিতার সামনে।
মায়ের আসনটিও অন্য রকম— এটি নবমুণ্ডির আসনের উপর প্রতিষ্ঠিত তিনি।
সব থেকে চমকপ্রদ তথ্যটি হল, কথিত আছে নেপাল ছাড়া ভারতের এই একটি মন্দিরে দেবীর এই রূপটি ‘মহাকাল ভৈরব’ রূপে পূজিত হন এবং তাঁর পায়ে শায়িত থাকেন স্বয়ং মহাদেব!
মন্দিরের প্রতিটা ইটে যেন লুকানো রয়েছে আরও শত রহস্যের ইশারা।
কালীপুজোর এই মরসুমে উত্তর কলকাতার এই মন্দিরটি যেন এক আলাদা আহ্বান জানায়— জীবনের হিসেব-নিকেশ ভুলে এক মুহূর্তে দাঁড়িয়ে যান চরম সত্যের মুখোমুখি। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।