প্রতীকী চিত্র।
কথায় আছে, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। বছর ভর নানা উৎসবের ঢেউ। দীপাবলির আলোর রেশটুকু কাটতে না কাটতেই শুরু হয়ে যায় বাঙালির আরও এক প্রাণের উৎসব— জগদ্ধাত্রী পুজো। আর এই উৎসবের নাম নিলেই সবার আগে যে শহরের কথা মনে আসে, তা হলো চন্দননগর। দুর্গাপুজোর মতোই এখানে সপ্তমী থেকে দশমী, চারদিন ধরে চলে এক অবিরাম উৎসবের স্রোত।
রাত জেগে ঠাকুর দেখা, পথের ধারে হরেক খাবারের স্বাদ নেওয়া, আর বন্ধুদের সঙ্গে গল্পে মেতে ওঠা— সব মিলিয়ে এক অন্য রকম উন্মাদনা। শুধু চন্দননগর নয়, হুগলি আর আশপাশের জেলা থেকেও লক্ষ লক্ষ মানুষ ছুটে আসেন এই আলোর শহরে। এখানকার প্রতিমা আর আলোর জৌলুস সত্যিই চোখ ধাঁধিয়ে দেয়।
তবে, যাঁরা বাইরের থেকে এই উৎসবের টানে আসেন, তাঁদের পক্ষে সব ঠাকুর খুঁজে দেখা বেশ কঠিন। তাই যাঁরা এ বছর চন্দননগরের সেরা কিছু পুজো ঘুরে দেখতে চান, তাঁদের জন্য একটি পথনির্দেশিকা তৈরি করা হল।
জগদ্ধাত্রী দর্শন শুরু করা যেতে পারে মানকুণ্ডু স্টেশনে নেমে। স্টেশন রোড ধরে সোজা জ্যোতির মোড় পর্যন্ত এগোলেই দেখা মিলবে বেশ কয়েকটি সেরা পুজোর। এদের মধ্যে রয়েছে মানকুণ্ডু স্পোর্টিং ক্লাব, নতুন পাড়া, পোস্ট অফিস গলি, চারাবাগান বালক সঙ্ঘ, নিয়োগীবাগান এবং সার্কাস মাঠের মতো নামকরা মণ্ডপগুলি।
এখান থেকে আপনার পরের গন্তব্য হতে পারে জ্যোতির মোড় থেকে ডান দিকে জি.টি রোড ধরে ভদ্রেশ্বরের দিকে। এই পথেই দেখা যাবে তেমাথা ছুতোর পাড়া, বারাসত দক্ষিণ চন্দননগর, অরবিন্দ সঙ্ঘ, বারাসত চক্রবর্তী পাড়া, বারাসাত ব্যানার্জি পাড়া, তেঁতুলতলা আর বারাসত গেটের মতো বহু পুরনো পুজো। প্রতিমার সাজ আর মণ্ডপের কারুকার্যে খুঁজে পাওয়া যাবে বাংলার সাবেকিয়ানা।
এ বার মধ্যাহ্নভোজ কিংবা হালকা জলখাবারের পালা। কারণ এর পর পৌঁছাতে হবে চন্দননগরে, যেখানে রয়েছে অজস্র নামকরা পুজো। জ্যোতির মোড় থেকে কাছেই দেখে নেওয়া যেতে পারে তেমাথা শিবমন্দিরের পুজো। তারপর জি.টি রোড ধরে আরও কিছুটা এগোলেই চোখে পড়বে লিচুতলা, সাবিনাড়া, ডুপ্লেক্সপট্টি, কাপালিপাড়া সাহেববাগান, আদি হালদারপাড়া, হালদারপাড়া ষষ্ঠী তলা, পাদ্রীপাড়া কালীতলা, লালবাগান পাদ্রীপাড়া আর লালবাগান চকের মতো ঐতিহ্যবাহী পুজো মণ্ডপ।
যাঁরা হুগলি খাদিনা মোড় হয়ে জিটি রোড ধরে তালডাঙা মোড় পেরিয়ে চন্দননগরে প্রবেশ করবেন, তারা জি.টি রোড ধরে এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন চাঁপাতলা, পঞ্চাননতলা, বোড় কালীতলা, চাউলপট্টি আর লক্ষ্মীগঞ্জ বাজারের পুজো। অন্য দিকে, যাঁরা সরাসরি চন্দননগর স্টেশন হয়ে আসবেন, তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছে কোলপুকুর, বৌবাজার এবং কোলাবাজারের মতো নামকরা সব উৎসব।
আর যদি তালডাঙার মোড় হয়ে পালপাড়ার দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়, তবে সেখানে দেখা যাবে বিবিরহাট, সন্তানসঙ্ঘ এবং বিদ্যালঙ্কারের মতো জনপ্রিয় ঠাকুর।
চন্দননগরের এই চার দিনের উৎসবে শুধু দেবীর আরাধনা নয়, জড়িয়ে থাকে আবেগ, লোকজনের সাথে লোকজনের দেখা হওয়া আর অনেক মিষ্টি স্মৃতি। তাই মানচিত্র মেনে উৎসবের এই মেজাজটা পুরোপুরি উপভোগ করা যেতে পারে।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।