দুর্গাপুজোর পর, বিজয়ার আমেজ পুরোপুরি কাটতে না কাটতেই লক্ষ্মীপুজো পেরিয়ে এই বঙ্গদেশে শুরু হয়ে গেছে আরেক শক্তি-আরাধনা—শ্যামা মায়ের পুজো।
চলতি সপ্তাহের সোমবার ছিল কালীপুজো ও আলোর উৎসব। শহরের নামী-দামী মণ্ডপগুলির তোড়জোড় শেষ, দর্শনার্থীদের ঢল নামছে। বারাসাতে কালীপুজোর রমরমা নতুন নয়, তবে কালীক্ষেত্র কলকাতাও কিন্তু কোনও অংশে পিছিয়ে নেই।
দক্ষিণ কলকাতার নামজাদা বারোয়ারি কালীপুজোগুলির মধ্যে অন্যতম হল যাদবপুরের সুলেখা মোড়ে, সুকান্ত সেতুর ঠিক বিপরীতে তৈরি মণ্ডপটি - শ্যামা পল্লি শ্যামা সংঘ। তারা এই বছর এ বছর পা দিল ৭৬তম বছরে।
এ বছর তাঁদের থিম—'১৯৩৪: স্বদেশে তৈরি স্বদেশের জন্য'। আর এই ভাবনাকে বাস্তবায়িত করেছে 'থিংকার্স' গ্রুপ।
মণ্ডপে সেজে উঠেছে সেই সময়ের গল্প, যখন দেশ উত্তাল ছিল বিদেশি দ্রব্য বর্জনের আহ্বানে।
গান্ধীজির স্বপ্নে, সতীষচন্দ্র দাশগুপ্ত, ননীগোপাল মৈত্র ও শঙ্করাচার্য মৈত্রের হাতে জন্ম নেয় স্বদেশী ‘সুলেখা’ কালি। কথিত আছে, ভাল লেখার কালি বলেই নাম দেন গান্ধীজি—‘সু-লেখা’।
আবার অনেকে বলেন, নামটি দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। যাঁর কালি পরে ব্যবহার করেছেন সত্যজিৎ রায়ের মতো গুণীজনও।
স্বদেশি আন্দোলনে এই কালির ব্যবহার ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। ব্রিটিশ আমলে বিপ্লবীরা এই কালির ব্যবহারেই স্বদেশি পণ্যের ডাক দিয়েছিলেন।
সেই টুকরো ইতিহাস, এই দীর্ঘ পথ চলার গল্পই এ বার শ্যামা পল্লী শ্যামা সংঘের মণ্ডপের মূল আকর্ষণ। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিমাও এখানে প্রতিবাদী রূপে বিরাজমান। মায়ের হাতে ব্রিটিশ আমলের তেরঙ্গা।
এই মণ্ডপের নেপথ্যে থাকা 'থিংকার্স' গ্রুপে রয়েছেন অরিন্ন সাহা, দেবায়ন ব্যানার্জী, প্রমেয় মন্ডল, সৈকত মান্না, দীপঞ্জর হালদার, সুদীপ মণ্ডল, সুমিত চক্রবর্তী, মৃগাঙ্ক শেখর বাগ, সঞ্জয় মন্ডল, মন্টি এবং সৌভিক দাস পোদ্দার।
আজকের বলপেনের যুগেও মাথা উঁচু করে অবস্থান করে থাকা 'সুলেখা' কালি ও ঝর্ণা কলমের এই ইতিহাসকে জানতে, এই কালীপুজো পরিক্রমায় এই মণ্ডপটি কিন্তু একে বারেই মিস করা চলবে না। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)