কালী পুজো এখন দোরগোড়ায়। আর সেই উৎসবের আগেই নতুন করে আলোচনায় কাটোয়ার ‘ঝুপো কালী’। এখানে দেবী রূপে পূজিত হয় একটি নিম গাছ! ৩০০ বছরেরও বেশি পুরনো এই নিম গাছের ইতিহাস যেমন অদ্ভুত, তেমনি টানটান রোমাঞ্চে ভরা।
অবিশ্বাস্য শোনালেও, স্থানীয়দের মুখে ফেরে এক ইতিহাস। এক সময়ে এলাকাটি ছিল গভীর জঙ্গলে ঢাকা। সেই অন্ধকারেই আস্তানা গেড়েছিল বর্গিবাহিনী বা ডাকাতেরা।
শোনা যায়, তারাই এই নিম গাছকে শক্তির প্রতীক কালী রূপে প্রতিষ্ঠা করে। ডাকাতি করতে বের হওয়ার আগে, এই দেবীর কাছেই নতজানু হত তারা।
সে এক অন্য রকম ভক্তি! পেশা যাই হোক, আরাধনার গভীরতা ছিল একই।
সময়ের সঙ্গে ডাকাতদের সেই ডেরা নিশ্চিহ্ন হয়েছে। কিন্তু তাদের হাতের সেই পুজো আজও রয়ে গিয়েছে।
ঝোপঝাড়ের মধ্যে এই নিম গাছকে ঘিরেই স্থানীয় মানুষ শুরু করেন শক্তির আরাধনা।
সেই থেকেই গাছটি পরিচিত হয় 'ঝুপো কালী' নামে। নিমগাছের শিকড় জড়িয়েই তৈরি হয় পূজাস্থল।
এই পুজো কেবল কালীপুজোর দিনে সীমাবদ্ধ নয়। বারো মাসই এখানে পুজো হয়, কিন্তু দীপান্বিতা অমাবস্যার দিনে ছবিটা হয় একেবারেই আলাদা—ভক্তদের উপচে পড়া ভিড়, এক বিপুল সমাগম।
প্রতি বছর এই কালীপুজো উপলক্ষে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের জন্য ভোজের আয়োজন করা হয়, যা এই লোকায়ত পুজোর সর্বজনীন রূপের কথা মনে করিয়ে দেয়।
ভক্তদের বিশ্বাস, এই নিমগাছেই দেবী কালী আসীন। তিনিই তাঁদের রক্ষা করেন, গ্রামের মঙ্গল করেন। ইতিহাস, বিশ্বাস আর লোককথার মিশেলে তৈরি কাটোয়ার এই ‘ঝুপো কালী’ এক জীবন্ত ঐতিহ্য, যেখানে ডাকাতদের পুজো আজ পরিণত হয়েছে ভক্তির উৎসবে। ( এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।