বাংলার বনেদি বাড়ির পুজো মানেই যে কেবল দুর্গাপুজো তা নয়, অনেক বনেদি বাড়ির কালীপুজোও সমান জনপ্রিয়। যেমন ৪০০ বছরের পুরনো প্রামাণিক বাড়ির কালীপুজো।
বংশ পরম্পরায় কংসবণিক সম্প্রদায়ের এই পুজো।
এ বাড়ির মা যেন সাক্ষাৎ এক 'বাচ্চা মেয়ে'। তাই হয়তো আজও গভীর রাতে ঠাকুর দালানে কান পাতলে নাকি শুনতে পাওয়া যায় অলৌকিক নূপুরের শব্দ!
পুজোর দিনে ১০৮টি প্রদীপ জ্বালানো হয়। এখানকার বিশেষ রীতি হল, দেবীকে প্রথমে ডাকের সাজে সাজিয়ে রাত গভীর হলে সোনার-রুপোর গয়না দিয়ে সাজানো হয়।
পরিবারের সদস্যরা সায়াহ্নে সিদ্ধি গ্রহণ করেন। নৈবেদ্যের জন্য পুরোহিত প্রদান করেন কারণবারি।
জানা যায়, বর্ধমানের ছেলে চন্দ্রশেখর প্রামাণিক কর্মের টানে এসেছিলেন কলকাতায়। কাঁসারি পাড়ায় ঘর বাঁধলেন। পরবর্তীকালে তাঁর সাতটি পরিবার এক সঙ্গে মিলে পরিচিত হলেন ‘সাধুকা প্রামাণিক’ নামে। আর সেই থেকেই শুরু হয় তাদের কুলদেবী কালীর আরাধনা।
পুজোর আচারেও রয়েছে বিশেষত্ব। দেবীর অর্ঘ্য তৈরি হয় ১০৮টি দুব্বো ঘাস আর ১০০টি ধান এক সঙ্গে একটি কাপড়ে বেঁধে।
চাল, কলা, ফলমূল-সহ মোট ১৬-১৭ রকমের নৈবেদ্যে সাজানো হয় মায়ের ভোগ।
লুচি, পাঁচ রকমের ভাজা, সন্দেশ এবং নতুন গুড়ের ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীর চরণে।
আরতির সময় ১০৮টি মাটির প্রদীপ এক সঙ্গে জ্বলে ওঠে, আলোয় ভরে ওঠে ঠাকুরদালান।
কালের নিয়মে অনেক কিছুই বদলেছে। এক সময় পুজোয় ধুনো পোড়ানো আর দণ্ডী কাটার রীতি ছিল, তা এখনও চালু রয়েছে। তবে যে রীতিতে ছেদ পড়েছে, তা হলো পশুবলি। পশুবলি চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই বাড়িতে।
বহু বছর আগে মায়ের বিসর্জনও ছিল দেখার মতো। সে কালে দেবীকে কাঁধে করে নিয়ে যেতেন প্রায় পঞ্চাশ জন লাঠিয়াল। সেই জাঁকজমক হয়তো আজ আর নেই, তবে ভক্তি আর বিশ্বাসে এতটুকুও ভাঁটা পড়েনি। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।