কৃষ্ণনগর সেজে উঠছে জগদ্ধাত্রী পুজোর রঙে। দীপের আলো নিভে যাওয়ার আগেই এই শহর ভরে যায় দেবী আগমনের উৎসবে। দুর্গাপুজো হয়তো বাঙালির শারদ আনন্দ, কিন্তু কৃষ্ণনগরের কাছে জগদ্ধাত্রীই আসল শারদ উৎসব। আর সেই উৎসবের প্রাণকেন্দ্র ‘বুড়িমা’। নবদ্বীপ-চন্দননগরের সঙ্গে সমান তালে সেজে ওঠে কৃষ্ণনগর। এই জগদ্ধাত্রী পুজো আজ ২৫৩ বছরে।
কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরেই শহরে জগদ্ধাত্রী পুজোর সূচনা।
দাবি করা হয়, রাজবাড়ির পুজো শুরু হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই ১৭৭২ সালে চাষাপাড়ায় শুরু হয় এই বারোয়ারি পুজো।
প্রায় ২৫০ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই আরাধনা।
তবে এই জনপ্রিয় প্রতিমা প্রথম থেকেই 'বুড়িমা' নামে পরিচিত ছিল না। প্রবীণদের মতে, সত্তর-পঁচাত্তর বছর আগে এই নাম সম্ভবত দেওয়া হয়েছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাষাপাড়ার এই প্রতিমা শুধু পুজো নয়, এক জীবন্ত আবেগে পরিণত হয়েছে।
বুড়িমার পুজো শুরুর ইতিহাস নিয়ে অবশ্য নানা মত চালু আছে। কেউ বলেন, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নাদেশ পেয়ে তৎকালীন লেঠেলদের হাতে এই পুজোর ভার তুলে দেন।
আবার কারও মতে, রাজবাড়ির বাইরেও মায়ের পুজো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যই রাজার উদ্যোগে এই পুজো শুরু হয়। কারণ যাই হোক না কেন, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের শহর এই পুজোর টানে নবমীর দিন যেন জনসমুদ্র হয়ে ওঠে। সাধারণ ভাবে চার দিনের পুজো হলেও কৃষ্ণনগরে মূল পুজো হয় নবমীর দিনে।
এখানে অন্য কোনও থিমের বাড়বাড়ন্ত নেই, কারণ মানুষের আবেগ জড়ানো এই প্রতিমাটিই এখানকার মূল আকর্ষণ, এটাই আসল থিম।
মজার কথা হল, এই পুজোর জন্য কোনও চাঁদা তুলতে হয় না। ভক্তরাই লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে নিজেদের চাঁদা জমা দিয়ে যান। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা জমা পড়ে দেবীর আরাধনার জন্য।
এমনকি ১৫ কেজির সোনার গয়নায় সেজে ওঠেন 'বুড়িমা'।
বুড়িমার পুজোয় দেবীর আগমন থেকে বিসর্জন সবেতেই রয়েছে এক অদ্ভুত ছন্দ ও মাধুর্য। যখন কৃষ্ণনগরের সকল প্রতিমার বিসর্জন শেষ হয়, তখন সব শেষে বিসর্জন হয় 'বুড়িমা'র। প্রথা মেনে দেবী কাঁধে চেপেই বিসর্জনের পথে যাত্রা করেন।
জলঙ্গীর ঘাটে যাওয়ার আগে তাঁকে রাজবাড়ি ঘোরানো হয়। রাস্তার দু'ধারে ভিড় জমান অগণিত ভক্ত। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।