কালীপুজোর রাত মানেই আলো-আঁধারি আর একরাশ গল্প। শুধু মাটির প্রদীপ বা টুনি বাল্ব নয়, সেই গল্পে মিশে থাকে সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো এক ইতিহাস।
যেমনটা দেখতে পাওয়া যায় প্রতাপগড় গরফার পালবাড়িতে। সেখানে প্রতি বছর ধুমধাম করে কালী-আরাধনা হয়। কিন্তু সেই জাঁকজমকের পিছনে লুকিয়ে আছে পূর্বপুরুষদের হাত ধরে অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুর থেকে এক সুদীর্ঘ পথ হেঁটে আসার কাহিনি।
এই পুজো শুরু করেছিলেন পাল পরিবারের পূর্বপুরুষ চন্দ্রশেখর পাল। সেই সময়ে পূর্ববঙ্গের এই পুজো ছিল এক বিশাল সামাজিক উৎসব।
কিন্তু দেশভাগ! সেই বিভাজনের আঁচ এসে পড়েছিল এই পরিবারেও। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই শিকড় উপড়ে এই বঙ্গে চলে আসতে হয় তাঁদের।
জমি-জমা, পুরনো ভিটে— সবই হয়তো পিছনে ফেলে এসেছিলেন। কিন্তু কালীপুজো আর তার ঐতিহ্যকে ফেলে আসেননি। যে ‘টান’ আজও বিদ্যমান।
গত ৭৫ বছর ধরে তাই এই বঙ্গেই বরুণকুমার পাল, তপনকুমার পাল ও রবিনকুমার পাল এই ঐতিহ্যকে বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন।
এই পুজো দেখতে গেলে বোঝা যায়, 'আড়ম্বর' নয়, এখানে 'আবেগ'টাই আসল।
পারিবারিক বাড়ির আঙিনায় তৈরি ছোট্ট মন্দিরে পরিবারের সদস্যরাই দেবীর ভক্ত।
প্রাচীন পদ্ধতিতে হয় কালীর আরাধনা। ঢাকের বাদ্যি আর আরতিতে মুখরিত পরিবেশ— সব মিলিয়ে এক অন্য রকম ছোঁয়া।
এক প্রজন্মের হাত ধরে অন্য প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্যের এই বাতিঘর পৌঁছে দেওয়ার গল্পই হয়তো পাল পরিবারের ৩৫০ বছরের এই কালীপুজোর আসল উপপাদ্য। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।