দীর্ঘাঙ্গী চেহারা। গায়ের রং নীল। কাঁধে এক ঢাল চুল। প্রতিমার পটল চেরা চোখে দেখেই ভক্তিতে মাথা নত হয়ে আসে ভক্তদের।
তিনি কলকাতার জনপ্রিয় ‘ফাটাকেষ্ট কালী’। বছরের পর বছর ধরে এই রূপে চেনা যায় দেবীকে। তবে এই বছর ঘটল কিছুটা ব্যতিক্রম।
বদলে গেল দেবীর মুখশ্রী। বিষয়টা খোলসা করেই বলা যাক।
এত কাল শিল্পী মাধব পালের হাতেই প্রাণ পেয়ে এসেছে ফাটাকেষ্ট কালীর প্রতিমা।
এ বার প্রতিমার দায়িত্বে ছিলেন শিল্পী মিন্টু পাল। এই বছরও গোলগাল চেহারার সুবিশাল প্রতিমা। তবে গায়ের রং আগের চেয়ে কিছুটা গাঢ়।
স্বাভাবিক ভাবেই শিল্পী বদলে যাওয়ার ফলে খানিক বদল এসেছে দেবীর রূপেও।
ইতিমধ্যেই মণ্ডপে পৌঁছে গিয়েছেন দেবী। তবে বিগত বছর ধরে যে জায়গায় প্রাণ পেতেন তিনি, কুমোরটুলির সেই চত্বরও ঘুরে এল আনন্দবাজার ডট কম।
কিন্তু কেন হঠাৎ বদলে গেলেন শিল্পী? আনন্দবাজার ডট কমের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল এই কালীপুজোর বর্তমান পরিচালক প্রবন্ধ রায়ের সঙ্গে।
প্রবন্ধ রায় বলেন, “তেমন কোনও কারণই নেই আসলে। নেই কোনও দ্বন্দ্ব বা বিভেদ। কিছু মানুষ চেয়েছিলেন নতুন শিল্পীকে দিয়ে কাজ করাতে।”
দশকের পর দশক ধরে কলকাতার বুকে আড়ম্বরের সঙ্গে পুজো হয়ে আসছে এই ফাটাকেষ্ট কালীর। স্বাভাবিক ভাবেই এই বদল নিয়ে সাধারণ মানুষের যে প্রশ্ন থাকবেই, তা অকপটেই স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি।
প্রবন্ধ রায় বলেন, “ঠিকই তো। অনেক প্রশ্নই উঠছে। কিন্তু এর নেপথ্যে সত্যিই কোনও কারণ নেই। এত দিনের শিল্পী মাধব পাল এতে আহত হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু বিভেদের কোনও বিষয় নেই।”
দেবীর নতুন রূপেও বেশ সন্তুষ্ট ক্লাব কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, “মা তো মা-ই হয়। সে তাঁর আসনে বসে গিয়েছেন ইতিমধ্যেই। কিন্তু মানুষ বলছেন, মায়ের মুখশ্রী নাকি আরও মিষ্টি হয়ে উঠেছে।”
“আমি তো মাকে, মা-ই দেখছি। আমার বেশ ভাল লাগছে।”- যোগ করেন পরিচালক।
শহর কলকাতায় প্রথম ডন ছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র দত্ত ওরফে ‘ফাটাকেষ্ট’। আর তাঁরই হাত ধরে জনপ্রিয়তা পায় কলকাতার এই ‘ফাটাকেষ্ট’ কালীপুজো।
১৯৯২ সালে হৃদ্রোগে তাঁর মৃত্যু হলেও আজও সাড়ম্বরেই পূজিত হয়ে আসছেন দেবী। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)