Ziro Festival

পুজোর ছুটিতে অচেনা স্বাদ, কলকাতা থেকে ঢের দূরে মাতিয়ে রাখল জ়িরো ভ্যালির গান-পার্বণ

লোকে বলে, পুজোর ছুটিতে বাঙালি নাকি পা বাড়িয়েই থাকে বেড়াতে যাবে বলে। ছুটি মিলতে না মিলতেই, তাই সো-জা অরুণাচল প্রদেশমুখী। গন্তব্য, সেখানকার জ়িরো মিউজিক ফেস্টিভ্যাল।

Advertisement

বিশ্বজ্যোতি ব্যানার্জি

শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০২৫ ১০:৪৩
Share:

সংগৃহীত চিত্র।

বাস যখন গুয়াহাটি ছাড়ল, তখন প্রায় সকাল সাড়ে ন'টা। আবহাওয়ার অ্যাপ বলছিল, বৃষ্টি হতে পারে। তবে তখনও পর্যন্ত শরতের আকাশে মেঘ-রোদ্দুরের মিলমিশ। লোকে বলে, পুজোর ছুটিতে বাঙালি নাকি পা বাড়িয়েই থাকে বেড়াতে যাবে বলে। বহু বছর হল কর্মসূত্রে সে সুযোগ হয়ে উঠত না, কলকাতাতেই পুজো কাটত। এ বছর সুযোগ আসতেই বুঝলাম, কেন বাঙালির সম্পর্কে এ কথাটা খাটে। কারণ ছুটি মিলতে না মিলতেই, আমিও সো-জা অরুণাচল প্রদেশমুখী। গন্তব্য, সেখানকার জ়িরো মিউজিক ফেস্টিভ্যাল। ২০১২ সালে শুরুর পর থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এই প্রত্যন্ত গ্রামের গান-পার্বণ আজ পৃথিবীর অন্যতম সেরা মিউজিক ফেস্টিভ্যালে পরিণত হয়েছে।

Advertisement

বাসের মধ্যে বেশিরভাগই কম বয়সি, যাদের পোশাকি নাম জেন জ়ি। আলাপ হল পাশে বসা অনিতা মুর্মুর সঙ্গে। উত্তরপাড়ায় বাড়ি, সেখানেই এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী। এক রকম জোর করেই নাকি বসের থেকে ছুটি আদায় করে সে বেরিয়ে পড়েছে নতুন শিল্পীদের গান শুনতে। সেইসঙ্গে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেতে আর দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা তারই মতো 'সোলো' পর্যটকদের সঙ্গে আলাপ জমাতে।

শরতের এই সময়টায় বাঙালি সব কিছুর মধ্যেই পুজোর গন্ধ খুঁজে পায় ঠিক। এই সময়ে অরুণাচলের সৌন্দর্য বড় অদ্ভুত। বৃষ্টি না থাকলেই ঝকঝক করে নীল আকাশ। তাতে তুলো তুলো সাদা মেঘ। পূর্ব হিমালয়ের পাহাড়ের কোলে আর উপত্যকার খাদে কাশফুলের বাহার উৎসবের আমেজ বয়ে আনে। চলন্ত বাস থেকে খাদের দিকে তাকালেই দেখা মেলে রোদ চিকচিকে পানিওর নদীর।

Advertisement

জ়িরো ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয় লোয়ার সুবনসিরি জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম, জ়িরো ভ্যালিতে। রোদ ঝলমলে হলদে-সবুজ এই উপত্যকা এই উৎসবকে কেন্দ্র করেই আরও রঙিন হয়ে ওঠে। চার দিকে ফেস্টুন, নিশান, আলোর মালা। এক বিশেষ ধরনের নরম বাঁশ ও তার বাঁখারী দিয়ে তৈরি হয় মঞ্চ, বসার জায়গা আর খাবারের অসংখ্য স্টল।

এ বছর চার দিনের এই গান-উৎসবে সামিল হয়েছিল প্রায় চল্লিশটি ব্যান্ড এবং সোলো শিল্পীরা। যে সব গায়ক বা গানের দল মুলস্রোতের গ্ল্যামার বা বাণিজ্যিক সাফল্যের হাতছানি এড়িয়ে নিজস্ব শিল্পীসত্তায় ভর করে নতুন ধরনের সঙ্গীত বা শব্দপট নির্মাণ করেন, এই ফেস্টিভ্যাল মূলত তাঁদের মঞ্চ। দেশ-বিদেশের শিল্পী, ব্যান্ড, ইন্ডি আর্টিস্ট ছাড়াও এখানে অনুষ্ঠান করেন উত্তর পূর্ব ভারতের নানা প্রান্ত থেকে আসা লোকসঙ্গীত শিল্পীর দল। উৎসবে যেমন গান শোনালেন তামিলনাড়ুর প্রান্তিক মানুষের কথা বলা র‍্যাপার আরিভু, তেমনই ফেলে দেওয়া জিনিসে বানানো বাদ্যযন্ত্র নিয়ে গান বেঁধে সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে সওয়াল করে গেল কঙ্গোর কিনগনগোলো কিনিয়াটা ব্যান্ড। পরিবেশ রক্ষার বার্তা উঠে এল ইংল্যান্ড-প্রবাসী শিল্পী সৌমিক দত্তের সরোদ-বাদনে। একই মঞ্চে আগুন ঝরালেন ‘খুদা জানে’ খ্যাত শিল্পা রাও। এমনকী, দেশবিদেশের তাবড় ব্যান্ডের সঙ্গে কাজ করে আসা, সদ্যপ্রয়াত জনপ্রিয় সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার মিতি অধিকারীকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে ভরিয়ে দিতেও ভোলেননি উদ্যোক্তারা। সব মিলিয়ে পুজোর দিনে আমার মতো বাঙালি পর্যটকের কাছে এ এক অন্য রকম শারদ-আমেজ!

গান ছাড়াও জিরো ফেস্টিভ্যালে ছিল ভিজ়্যুয়াল স্টোরিটেলিং, আর্ট থেরাপি, স্টার গেজিং, থিয়েটার এবং আরও নানা বিষয়ের ওয়ার্কশপ।

কিন্তু পুজোর পেটপুজোর কী হবে? সে সবও মোটেই বাদ যায়নি কিন্তু! পাহাড়ি আমিষ বা নিরামিষ যে কোনও খাবারই সাধারণত বেশ স্বাদে-গন্ধে ভরপুর। নানা রকম রোস্ট, বারবিকিউ‌ আর ফার্মেন্টেড আমিষ খাবারের সুবাসে গোটা জায়গাটা ম ম করছিল। সঙ্গে হরেক পানীয়ও মজুত। রাইস ও মিলেট বিয়ার, রাইস ওয়াইন আর রকমারি ফ্রুট ওয়াইন এখানকার স্পেশাল পানীয়।

ফেস্টিভ্যাল শুরু হয় মোটামুটি দুপুর একটা থেকে। তার আগে প্রতিদিনই সকালের দিকে আমাদের ক্যাম্প থেকে বেশ মজাদার কিছু অ্যাক্টিভিটির আয়োজন করা হয়েছিল। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য 'হং' ভিলেজ ট্যুর। পায়ে হেঁটে গ্রাম দেখার পরে আমাদের দলটাকে নিয়ে যাওয়া হল স্থানীয় এক ওয়াইনারিতে। এই প্রথম চাক্ষুষ করলাম টাটকা ফল থেকে কী ভাবে তৈরি হয় নানা স্বাদের ওয়াইন। আর এক মজাদার অভিজ্ঞতা হল প্যাডি ফিশিং। ওখানে গ্রামের মানুষ ধানক্ষেতের মধ্যেই ছোট ছোট মাছের চাষ করে। হাত দিয়ে জ্যান্ত মাছ ধরা কি মুখের কথা ? খুব হইহই করে আমরা বারো জন মিলে ধরলাম মোটে পাঁচটা মাছ! সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। অদূরে জিরো'র স্টেজে চলছে সাউন্ড চেক আর আমরা জলকাদায় মাখামাখি হয়ে ধানক্ষেতের মধ্যে মাছ ধরার প্রতিযোগিতায় নেমেছি। এক অন্য রকম পুজোর সফরে প্রায় পরাবাস্তব হয়ে ওঠা যে দৃশ্য বহু দিন স্মৃতির অলিন্দে ঘোরাফেরা করবে। আর আবহে বাজবে তরুণ প্রজন্মের গান।

‘আনন্দ উৎসব ২০২৫’-এর সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছেন একাধিক সহযোগী। প্রেজ়েন্টিং পার্টনার ‘মারুতি সুজ়ুকি অ্যারেনা’। অন্যান্য সহযোগীরা হলেন ওয়েডিং পার্টনার ‘এবিপি ওয়ানস্টপ ওয়েডিং’, ফ্যাশন পার্টনার ‘কসমো বাজ়ার’, নলেজ পার্টনার ‘টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি’, ব্যাঙ্কিং পার্টনার ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া’, কমফোর্ট পার্টনার ‘কার্লন’।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement