কলকাতার বিভিন্ন বাঁকের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কতই না প্রাচীন কালীমন্দিরের ইতিহাস।
এমনই একটি পীঠস্থান হল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে দেবী কালিকার এই মন্দির। যা ‘শিবানীপীঠ’ নামেও পরিচিত।
স্থানীয় ভট্টাচার্য বাড়ির পূর্বপুরুষদের হাত ধরেই প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয় এই শিবানীপীঠের। আজও ভক্তিভরে নিষ্ঠার সঙ্গে সেখানে পূজিত হন দেবী শিবানী।
কিন্তু কী ভাবে শুরু হল এই পুজো?
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৩০০ বঙ্গাব্দ নাগাদ বারুইপুরের জমিদার রমেন্দ্র রায়চৌধুরী তাঁদের বংশের কুলদেবতার আরাধনার জন্য ব্রাহ্মণ নিয়ে আসেন লক্ষ্মীকান্তপুর থেকে। তাঁরা ছিলেন ভট্টাচার্য।
এলাকাতেই সেই ব্রাহ্মণদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন রমেন্দ্র। সেই থেকেই ওই অঞ্চলের একটি পাড়ার নাম হয় ‘ভট্টাচার্য পাড়া’।
ক্রমে ভট্টাচার্য বাড়িতে শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। ১৯৩৯ সালে ভট্টাচার্য বাড়ির ছেলে অক্ষয়কুমার ভট্টাচার্যের প্রচলিত অক্ষয়কুঞ্জের দুর্গাপুজো আজও সর্বজনবিদিত।
এই প্রসঙ্গেই আসে কালী পুজোর ইতিহাস। অক্ষয়কুমারের নাতনি নিরুপমা এবং জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ অনুরূপা স্বপ্নাদেশ পান, তাঁদের বাড়ির পাশের পুকুরে দেবীর ঘট রয়েছে।
যেমন স্বপ্ন, তেমন কাজ। পুকুর থেকে তোলা হয় ঘট। ১৯৬৬ সালে কালীপুজোর দিনে প্রতিষ্ঠিত হন দেবী শিবানী। তবে প্রাথমিক ভাবে দেবী পূজিত হতেন ভবানী নামে।
পরবর্তীতে পরিবারের সদস্য দুর্গাদাস ভট্টাচার্য স্বপ্নাদেশ পান, তাঁর মেয়ের নামেই দেবীর নামকরণ করতে হবে। সেই মতো নাম হয় দেবী শিবানী। দেবী খুবই জাগ্রত বলে বিশ্বাস করে গোটা এলাকা। এমনকী, তাঁর কৃপায় নাকি দূর হয় মারণব্যাধিও।
নিমকাঠের তৈরি বিগ্রহকে নিয়মিত নিবেদন করা হয় আমিষ ভোগ। তাতে থাকে সাদা ভাত, মাছ, ভাজা, তরকারি, চাটনি ও পায়েস।
এ বাড়িতে দশকের পর দশক ধরে শিবানী নামেই পূজিত হয়ে আসছেন দেবী কালিকা। শোনা যায়, যে পুকুর থেকে ঘট পাওয়া গিয়েছিল, সেই পুকুর আজও একই জায়গায় বিরাজমান। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।