সুবিশাল প্রতিমা। ভক্তদের জন্য যেমন মায়াভরা মুখ, তেমনই দুই চোখে তেজ।
তাঁর সামনে মাথা নত হয় শত শত দর্শনার্থীর।
হ্যাঁ, তিনি নৈহাটির বড়মা। ২২ ফুট দৈর্ঘ্যের মূর্তি। তবে কেউ কেউ বলে, দেবীর উচ্চতা নাকি এর চেয়েও বেশি।
তবে এই উচ্চতার চেয়েও বেশি হল বড়মার জনপ্রিয়তা। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এক অলৌকিক শক্তি রয়েছে দেবীর।
‘ভবেশকালী’ থেকে নৈহাটির ‘বড়মা’। কী ভাবে হল এই নামকরণ? কী-ই বা এর মাহাত্ম্য? রইল সবটাই।
প্রায় একশো বছর আগের কথা। নবদ্বীপে রাস দেখতে গিয়েছিলেন নৈহাটির বাসিন্দা ভবেশ চক্রবর্তী। সেখানেই রক্ষাকালীর মূর্তি দেখে ঠিক করেছিলেন, বাড়িতে ঠিক একই আকারের কালীমূর্তির পুজো করবেন তিনি।
যেমন ভাবা, তেমন কাজ। সেই মতোই শুরু হয় পুজো। প্রতি বছরই নাকি বাড়তে থাকে মূর্তির উচ্চতা।
এর ফলে আর বাড়িতে পুজো করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ঋষি অরবিন্দ রোডের পাশেই শুরু হয় পুজো। এ ভাবেই দেবীর নাম হয়েছিল ‘ভবেশকালী’।
পরবর্তীতে উচ্চতার কারণে সকলের কাছে ‘বড়মা’ নামে পরিচিত হন দেবী।
অনেকেই মনে করেন, দেবীর পায়ে এক বার মাথা ঠেকালে মনের বাসনা পূর্ণ হবেই। আর সেই কারণেই প্রতি বছর দূরদূরান্ত থেকে অগণিত ভক্তদের ছুটে আসা। মনস্কামনা পূরণ হলে নিজেরাই গড়ে দেন লক্ষ লক্ষ টাকার অলঙ্কার।
দেবীর সাজসজ্জাতেও নেই কোনও কার্পণ্য। মাথা থেকে পা মুড়ে দেওয়া হয় সোনার গয়নায়। বিসর্জনের দিন সাজানো হয় ফুল দিয়ে। কেবল তাঁর এবং শিবের চক্ষু ছাড়া খুলে নেওয়া হয় অন্যান্য সব অলঙ্কার।
বলা হয়, সবার আগে বিসর্জন হয় বড়মার। তার পরে অন্যান্য প্রতিমার।
সারা বছরই দেবীর নিত্যপুজো হয়ে থাকে। কালীপুজোর সময়ে পরপর চার দিন বিশেষ পুজো নিবেদন করা হয় তাঁকে। প্রত্যেক দিন ভিন্ন প্রকারের ভোগ।
পুজোর রাতে বড়মার ভোগে থাকে পোলাও, খিচুড়ি, পাঁচ রকমের ভাজা, তরকারি, লুচি, চাটনি ও পায়েস। বিসর্জনের এক দিন আগে রয়েছে দেবীকে লাড্ডু ভোগ দেওয়ার প্রথা। ( এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।