যুদ্ধজয়ের মতো উত্তরবঙ্গের টিকিট কেটে ফেলেছেন, উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন এটা নিশ্চিত। কিন্তু কোথায় যাবেন, কী করবেন– ভেবে পাচ্ছেন না! ভিড়, হইচই এড়িয়ে কটা দিন একটু শান্তিতে, নিরিবিলিতে কাটাতে চাইছেন? তা হলে ঘুরে আসতে পারেন এই অফবিট জায়গাগুলি থেকে।
মাজুয়া: দার্জিলিং থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত এই জায়গাটি। মানেভঞ্জন থেকে আধ ঘণ্টা লাগে রঙ্গিত নদীর পাশে অবস্থিত সবুজে ঘেরা মাজুয়ায় পৌঁছোতে। জঙ্গলের মাঝে গুটিকয় বাড়ি নিয়ে এই পাহাড়ি গ্রাম। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা রঙ্গিত, যেখানে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানো যায়। চাইলে গাড়ি নিয়ে ঘুরে আসা যায় পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে উঁচু জায়গা সান্দাকফু থেকে, পথে পড়বে টুংলু, টুমলিং। কাঞ্চনজঙ্ঘা তো বটেই, ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা মিলতে পারে এভারেস্টেরও। থাকার জন্য হাজার দেড়েকের মধ্যে পেয়ে যাবেন একাধিক হোমস্টে।
বিজনবাড়ি: মাজুয়ার এই রঙ্গিত নদী ধরে যদি সোজা নেমে যাওয়া যায় পৌঁছে যাবেন বিজনবাড়িতে। নদীতে স্নান থেকে জামুনির গ্লাসব্রিজ ভ্রমণ, জঙ্গলের পথ ধরে হেঁটে বেড়ানো আর শান্তিতে দুটো দিন কাটানোর আদর্শ জায়গা। ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন হলে দেখা পেতে পারেন ময়ূরের।
রংভং: পাইন বনের সারি, গভীর জঙ্গলের বুক চিরে প্রায় না থাকা পথ নেমে গিয়েছে এই ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামে। ঘরে বসে জানলা খুললে বা পর্দা সরালেই দেখা মিলবে মিরিক, শিলিগুড়ির অপরূপ ভিউ। অষ্টমীর সকালে অঞ্জলির বদলে চায়ের কাপ হাতে এরকম একটা ভিউয়ের সকালও কিন্তু মন্দ নয়! এখানে এলে পায়ে হেঁটে ঘুরে নিতে পারেন কাছের চা বাগান, নইলে একটু ট্রেক করে পৌঁছে যেতে পারেন ছোট্ট ঝোরায়। সেদিনের স্নান নাহয় এখানেই সেরে নিলেন! থাকার জন্য অপশন বেশি নেই, তবে ২-৩ হোমস্টে পেয়েই যাবেন।
লুংচু: কোলাখামের নাম নিশ্চয় শুনেছেন? এখান থেকে আরও একটু নেমে গেলেই পড়বে পাহাড়ের কোলে লুকানো গ্রাম লুংচু যেখান থেকে হাঁটতে চলতে আকাশ পরিষ্কার থাকলেই দেখা মেলে কাঞ্চনজঙ্ঘার। এখান থেকে গাড়ি নিয়ে নেওড়া উপত্যকা, রিশপ ঘুরে আসতে পারেন। ইচ্ছে বা সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন পশ্চিমবঙ্গ সিকিমের বর্ডারে অবস্থিত মুলখারকা হ্রদ থেকে। আকাশ স্বচ্ছ থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘার যে প্রতিবিম্ব এই হ্রদে দেখা যায় তার রূপ অবর্ণনীয়।
কাফেরগাঁও: একসঙ্গে জঙ্গল, কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং নিরিবিলি কোনও জায়গা চাইলে এটা হতে পারে আপনার পছন্দের গন্তব্য। থাকার জন্য বহু অপশন রয়েছে, যাতায়াতেও বিশেষ সমস্যা হবে না।
রঙ্গ: ভারত ভুটানের বর্ডারের কাছে অবস্থিত রঙ্গ গ্রামে দেখা মেলে নানা রকমের জানা অজানা পাখির। রয়েছে দুরন্ত গতিতে বয়ে চলা রঙ্গ নদী। এখানে চাইলে পায়ে হেঁটে জঙ্গলে ঘুরে আসতে পারেন, যেতে পারেন রঙ্গ মনাস্ট্রি থেকে। জলঢাকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, ঝান্ডি, বিন্দুও রয়েছে কাছাকাছিই।
ঝেঁপি: কাঞ্চনজঙ্ঘার ভিউ চান? পাবেন। ধাপ চাষ দেখতে চান? তাও পাবেন। দার্জিলিঙের কাছাকাছি থাকতে চাইছেন? আরে এটা তো একদম আদর্শ জায়গা। কী বললেন ক’দিন নিরিবিলিতে পাখি দেখতে চান? তা হলে তো ঝেঁপি আসতেই হবে। এখান থেকে দার্জিলিং ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। থাকারও রয়েছে বহু অপশন।
ভুটানঘাট: আলিপুরদুয়ারের এই জায়গাটি গেলে মন হারিয়ে যেতে চাইবেই চাইবেই। পাহাড়ি নদীর সঙ্গে সবুজ ঘেরা পাহাড় আর চারিপাশের মন ভালো করা দৃশ্য চোখ, মন– দুটোকেই শান্ত করে। রায়ডক নদীর পাশে অবস্থিত এই জায়গা থেকে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন বক্সা থেকেও। গণ্ডার, বাঘমামার সঙ্গে মোলাকাত সেরে ঘুরে নিতে পারেন আশেপাশে থাকা কিছু হ্রদ যেমন নরথালি।
দারাগাঁও: কালিম্পং জেলার ছোট্ট একটি গ্রাম দারাগাঁও। মাত্র কয়েকটি বাড়ি নিয়েই তৈরি এই গ্রাম থেকে যে দিকেই তাকাবেন সবুজ দেখবেন, আর কাঞ্চনজঙ্ঘা তো আছেই। গোটা রেঞ্জের ভিউ এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায়। ইচ্ছে হলে জলসা বাংলো থেকে দেলো পার্ক, দূরপিন মনাস্ট্রি, গলফ কোর্স, ইত্যাদিও দেখে আসতে পারেন। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)