দুর্গাপুজোর ছুটিতে কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য বড় শহরে যখন ভিড়ে ঠাসা, তখন আপনি যদি এক বা দু’দিনের জন্য পুরনো ঐতিহ্যের খোঁজে যেতে চান, তবে মুর্শিদাবাদ হতে পারে সেরা গন্তব্য। এই প্রাচীন শহরটি তার নবাবী আমলের ইতিহাস এবং বনেদি বাড়ির পুজোর জন্য বিখ্যাত। পুজোর সময় মুর্শিদাবাদের এই বাড়িগুলি এক ভিন্ন রূপ ধারণ করে, যেখানে আপনি দেখতে পাবেন শতাব্দী পুরনো প্রথা এবং রীতিনীতি। আর তার পাশাপাশি মনে লেগে যাবে প্রকৃতির ছোঁয়া
যে পুজোগুলি দেখবেন: মুর্শিদাবাদে এক দিনের জন্য ঘুুরতে গেলে যে বিখ্যাত পুজোগুলি আপনার অবশ্যই দেখা উচিত, তার তালিকা রইল: কাশিমবাজার রাজবাড়ি: মুর্শিদাবাদের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং জাঁকজমকপূর্ণ পুজোগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। এই রাজবাড়ির পুজো প্রায় তিনশো বছরের পুরনো। এখানে দেবীর প্রতিমা তৈরি হয় পুরনো ধাঁচে এবং প্রতিমার অলঙ্কারগুলিও পুরনো দিনের নকশার। এখানে পুজো দেখতে গেলে আপনি রাজপরিবারের আতিথেয়তা এবং আভিজাত্যের এক দারুণ অভিজ্ঞতা লাভ করবেন।
নশীপুর রাজবাড়ি: এটি মুর্শিদাবাদের আর একটি ঐতিহ্যপূর্ণ রাজবাড়ি, যেখানে আজও সাবেকি প্রথা মেনে দুর্গাপুজো হয়। এখানকার প্রতিমা একচালা এবং কাঠামো থেকে শুরু করে পুজোর প্রতিটি নিয়ম ঐতিহ্যপূর্ণ। পুজোর ক’দিন এই রাজবাড়িতে এক অন্য রকম উৎসবের আমেজ থাকে।
জগৎ শেঠের বাড়ি: জগৎ শেঠের বাড়ি এক সময় বাংলার অর্থনীতির কেন্দ্র ছিল। সেই সময় থেকেই এই বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। যদিও এখন সেই জাঁকজমক না থাকলেও, এখানকার পুজোর ঐতিহ্য এবং ইতিহাস আপনাকে মুগ্ধ করবে।
পুজোর পাশাপাশি যে জায়গাগুলো ঘুরে দেখতে পারেন: মুর্শিদাবাদ শুধু পুজোর জন্য নয়, তার ঐতিহাসিক স্থাপত্যের জন্যও পরিচিত। পুজোর দিনগুলিতে ঠাকুর দেখার ফাঁকে আপনি সহজেই এই জায়গাগুলি ঘুরে আসতে পারেন:
হাজারদুয়ারি প্যালেস: এটি মুর্শিদাবাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। বিশাল এই প্রাসাদটি তার হাজারটি দরজার (যার মধ্যে ৯০০টি নকল) জন্য বিখ্যাত। পুজোর দিনেও এখানে পর্যটকদের ভিড় থাকে।
কাটরা মসজিদ: এই ঐতিহাসিক মসজিদটি মুর্শিদাবাদের অন্যতম পুরনো স্থাপত্য। নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ এই মসজিদটি তৈরি করেছিলেন। এর বিশাল গম্বুজ এবং মিনারগুলি আজও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
জাহান কোষা কামান: এটি একটি বিশাল কামান যা নবাবের অস্ত্রাগারে ব্যবহৃত হত। এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।
মোতিঝিল: মোতিঝিল একটি অশ্বক্ষুরাকৃতির হ্রদ। এর চারপাশে বাগান এবং নবাবী আমলের কিছু ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এখানে একটি শান্ত পরিবেশে কিছুটা সময় কাটাতে পারেন।
কিছু টিপ্স: একদিনে যদি এই সব জায়গা ঘুরে দেখতে চান, তবে সকাল সকাল যাত্রা শুরু করুন। মুর্শিদাবাদ শহর এবং তার আশেপাশে ঘোরার জন্য টোটো বা রিকশা ভাড়া করতে পারেন, যা আপনাকে অল্প সময়ে সব জায়গায় পৌঁছে দেবে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।