শহর কলকাতা একটি প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী এবং ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর। এ শহর ঘুরতে দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ, বিশেষত পর্যটকেরা তো বটেই, এমনকী গবেষকরাও আসেন। দিনের বেলা শহরটা যেমন সুন্দর, রাতেও এর আকর্ষণ বড় কম নয়! রাতের কলকাতায় শহরের প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যগুলি সেজে ওঠে ঝলমলে আলোয়। চাইলে যে কেউ সেগুলির সৌন্দর্য বাইরে থেকে ঘুরে দেখতেই পারেন। কারণ, রাতে অধিকাংশ ভবনই বন্ধ থাকে। দীপাবলির আগে রাতের কলকাতার তেমনই কিছু ঘোরার জায়গার সন্ধান রইল এখানে।
প্রিন্সেপ ঘাট: হুগলি নদীর তীরে ব্রিটিশ যুগের একটি ঐতিহাসিক ঘাট এটি। প্রাচ্যবিদ জেমস প্রিন্সেপের স্মৃতিতে নির্মিত (১৮৪১) এই ঘাটের গ্রিকো-গথিক স্থাপত্য রাতের আলোয় অপরূপ হয়ে ওঠে! পাশেই আছে বিদ্যাসাগর সেতু। রাতের আলো-অন্ধকারে সেটিও দেখতে সুন্দর লাগে।
মেট্রোপলিটন বিল্ডিং বা এলআইসি ভবন: এক সময়ে এটি 'হোয়াইটওয়ে লেডল ডিপার্টমেন্ট স্টোর' নামে পরিচিত ছিল। একে এশিয়ার প্রথম ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বলা হয়। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের প্রথম জার্সি এখান থেকেই আনা হয়েছিল বলে জনশ্রুতি রয়েছে। নিও-ব্যারোক স্থাপত্যশৈলীর এই ভবনে একটি ক্লক টাওয়ার রয়েছে।
জিপিও ভবন: এটি কলকাতার কেন্দ্রীয় এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ডাকঘর। এই স্থানেই এক সময়ে পুরনো ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গটি ছিল। মনোরম স্থাপত্যশৈলীর এই ভবনটি ১৮৬৮ সালে নির্মিত হয়। যার নকশা করেছিলেন ওয়াল্টার বি. গ্রেনভিল।
সেন্ট জনস চার্চ: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দ্বারা স্থাপিত প্রথম ভবনগুলির মধ্যে অন্যতম এটি। কলকাতার তৃতীয় প্রাচীনতম গির্জা। লন্ডনের সেন্ট মার্টিন-ইন-দ্য-ফিল্ডস চার্চের আদলে নির্মিত (১৭৮৭)। এই গির্জাটি এক সময়ে কলকাতার অ্যাংলিকান ক্যাথিড্রাল ছিল।
সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল: এটি ভারতে এক অনন্য ইন্দো-গথিক স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কাছে এই গির্জাটির নির্মাণ ১৮৪৭ সালে সম্পন্ন হয়। এর সুউচ্চ কেন্দ্রীয় চূড়া এবং রঙিন কাচের জানালা রাতে আলোকিত হয়। এটি চার্চ অফ নর্থ ইন্ডিয়ার অধীন কলকাতা ডায়োসিসের কেন্দ্রস্থল।
জোড়া গির্জা: এর আসল নাম সেন্ট জেমস চার্চ। কিন্তু দু’টি চূড়ার জন্য 'জোড়া গির্জা' নামে বেশি পরিচিত। ১৮৬২ সালে গথিক স্থাপত্যশৈলীতে এটি নির্মিত হয়। এন্টালিতে অবস্থিত কলকাতার অন্যতম পুরোনো ও বড় এই গির্জাটির দুটি চূড়া কলকাতার আকাশে নজর কাড়ে।
সেক্রেড হার্ট চার্চ: এস.এন. ব্যানার্জি রোডে অবস্থিত এই গির্জাটি ১৮৩৪ সালে নির্মিত হয়। এটি রোমান ক্যাথলিক চার্চ এবং গথিক স্থাপত্যশৈলীর এক নিদর্শন। মূলত স্থানীয় পর্তুগিজ সম্প্রদায়ের জন্য এটি তৈরি হয়েছিল। রাতে এর শান্ত পরিবেশ ও আলোর সাজ দর্শনীয়।
ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল: এটি রানি ভিক্টোরিয়ার স্মৃতির উদ্দেশে শ্বেতপাথরে নির্মিত একটি প্রাসাদোপম সৌধ। এর স্থাপত্যশৈলীতে ইউরোপীয় রীতির সঙ্গে ইন্দো-ইসলামিক রীতির মিশ্রণ দেখা যায়। সন্ধ্যা নামলে ভবনটি জাদুকরী আলোয় ঝলমল করে!
কলকাতার এই পুরনো স্থাপত্যগুলি ঔপনিবেশিক আমলের সাক্ষ্য বহন করে। সন্ধ্যা নামলে উজ্জ্বল আলোয় তাদের সৌন্দর্য বহু গুণ বেড়ে যায়। ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার এই মেলবন্ধন কলকাতার রাতের আকর্ষণ। ইতিহাসপ্রেমী ও ফটোগ্রাফারদের কাছে এই স্থানগুলি তাই খুব প্রিয়। আসন্ন দীপাবলিতে আপনিও সেগুলি ঘুরে দেখতে পারেন। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।