একটা জায়গায় কত বার আর বেড়াতে যাব? এক বার বই দু’বার তো যাব না! এমন ভাবনা থাকে বহু মানুষেরই। সেই কারণে এক বারেই যত বেশি সম্ভব জায়গা দেখে নিতে চান তাঁরা। আর তা করতে গিয়ে অনেক সময়েই বেড়ানোর বদলে স্রেফ ছুটে বেড়ান। নতুন প্রজন্মের অনেকেই কিন্তু আর সেই মতে বিশ্বাসী নন। তাঁদের এখন পছন্দের ভ্রমণ-নীতি হল ‘ধীরে বেড়ানো’ বা স্লো ট্র্যাভেলিং। ব্যাপারটা কী?
স্লো ট্র্যাভেলিং যে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তার সবচেয়ে বড় কারণ এটা শুধু ভ্রমণের ধরন নয়। বরং এক হিসাবে জীবনদর্শনও বটে। কেন এই বেড়ানোর পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, আসুন জেনে নেওয়া যাক তার ৮টি কারণ।
বেড়ানোর জায়গাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া: দ্রুত এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় ছুটে বেড়ানোর বদলে স্লো ট্র্যাভেলিং একটি স্থানের সংস্কৃতি, মানুষ, খাবার ও জীবনযাত্রাকে ভাল ভাবে অনুভব করার সুযোগ করে দেয়। জায়গাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ দেয় পর্যটককে।
মানসিক চাপ কমায়: বেড়াতে গিয়ে যদি দৌড়োতেই হয়, সারা ক্ষণ চাপে থাকতে হয়– ট্রেন বা বাস মিস-ই না করেন, তা হলে আর আনন্দ কোথায়? স্লো ট্র্যাভেলিং এই চাপ থেকেই মুক্তি দেয়। ব্যস্ততা বিহীন প্ল্যান ও আরামে ঘোরাঘুরি মানসিক স্বস্তি আনে। বেড়ানোর শেষে গিয়ে মনে হয় না, ‘আর দুটো দিন বেশি থাকলে ভাল হত।’
খরচ কম হয়: এক জায়গায় বেশি সময় থাকার ফলে খরচ কমে। বিশেষত যানবাহনের খরচ। তা ছাড়া স্থানীয় বাজার থেকে খাবার কেনা আর হোমস্টেতে থাকার কারণে বাজেটও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
পরিবেশবান্ধব ভ্রমণ: বারবার বিমান বা দূরপাল্লার যানবাহন ব্যবহার না করার ফলে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমে। বর্তমান প্রজন্ম এই বিষয়ে সচেতন। এখন সকলেই চান, পরিবেশের উপরে দূষণের প্রভাব কম ফেলতে। সেই লক্ষ্যেই জনপ্রিয় হচ্ছে এই বেড়ানোর পদ্ধতি।
মানুষের পাশে থাকা: ছোট হোটেল, লোকাল গাইড, হস্তশিল্প বা স্থানীয় বাজার থেকে কেনাকাটা সরাসরি স্থানীয়দের আয় বাড়ায়। বিশেষ করে সেই সব মানুষ, যাঁরা আর্থসামাজিক কাঠামোর নীচের দিকে রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ধরনের উদ্যোগ সুফল এনে দেয়।
নতুন মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়: এক জায়গায় বেশি সময় কাটালে স্থানীয়দের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়। যা বেড়ানোকে আরও মনের মতো করে তুলতে পারে।
নিজেকে চেনার সুযোগ: স্লো ট্র্যাভেলিং মানে নিজের সঙ্গে বেশি করে সময় কাটানো, নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি এবং জীবনের গতি নিয়ে নতুন করে ভাবা। এই সবই নিজেকে চেনার সুযোগ করে দেয়।
অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতার সুযোগ: তাড়াহুড়ো নেই। এক জায়গায় অনেক দিন আছেন। হঠাৎ করেই চলে এল নিমন্ত্রণ। হয়তো ওই এলাকার কোনও পুজো কিংবা স্থানীয় কারও বাড়িতে বিয়ে। এই ধরনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ে স্লো ট্র্যাভেলিংয়ের ক্ষেত্রে।
এই সব কারণেই ক্রমশ নতুন প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে স্লো ট্র্যাভেলিং। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।)