বিশ্ব জুড়ে ২৩০ কোটিরও বেশি মানুষ এখনও দারিদ্রের কবলে। এই তালিকায় অবশ্য তাঁরাও রয়েছেন, খাতায়-কলমে যাঁদের ‘দরিদ্র’ তকমা দেওয়া হয় না। কিন্তু কার্যত তাঁরা চরম অনটনের মধ্যে দিন গুজরান করে অত্যন্ত দুর্দশার মধ্যে রয়েছেন। এঁদের ‘প্রায় দরিদ্র’ বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের এক সমীক্ষায় ধরা পড়েছে বিপন্নতার এই বাস্তব সত্য। তারা জানিয়েছে, আর্থিক সঙ্কট ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খাদ্য সামগ্রীর চড়া দাম এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসার তাণ্ডব পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের শাখা ইউনাইটেড নেশন্স ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) আজ টোকিওতে প্রকাশিত এই রিপোর্ট জানিয়েছে, দুনিয়া জুড়ে দারিদ্র কমার লক্ষণ দেখা দিলেও কিছু শ্রেণির মানুষ নানা ‘কাঠামোগত’ সমস্যায় বিপন্ন। ইউএনডিপি প্রধান হেলেন ক্লার্ক বলেন, “এই প্রথম দারিদ্র নিয়ে সমীক্ষার আওতায় এল বিপন্নতা ও তা প্রতিরোধের বিষয়টি। ‘মানব উন্নয়নের আতস কাচে’ যাচাই করা হয়েছে প্রকৃত দারিদ্রকে।” বিপন্নতা ঠেকাতে ‘সাস্টেনিং হিউম্যান প্রোগ্রেস: রিডিউসিং ভালনারেবিলিটিজ অ্যান্ড বিল্ডিং রেজিলিয়েন্স’ শীর্ষক এই সমীক্ষার দাওয়াই:
• সমাজ উন্নয়নের সমস্ত মূল পরিষেবা সকলের নাগালে আনা
• সকলের জন্য কাজ
• সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করা
প্রকৃতপক্ষে পরিসংখ্যানের বিচারে অনেকেই গরিব না-হলেও, তাঁরা যে-ভাবে বাস করছেন, তাকে প্রকারান্তরে দারিদ্রই বলা যায়। রাষ্ট্রপুঞ্জেরই ২০১৪ সালের হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টও বলছে: দারিদ্রের সংখ্যাকে শূন্যে নামিয়ে আনাটাই শেষ কথা নয়। যাঁরা দারিদ্রসীমা থেকে বেরোচ্ছেন, তাঁরা সেখানেই থাকতে পারছেন, না কি ফের প্রদীপের নীচেই থাকা অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছেন, সেটাও হিসেবে আনতে হবে। রিপোর্ট অনুযায়ী ৯১টি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে প্রায় ১৫০ কোটি মানুষ খাতায়-কলমে দরিদ্র। এর সঙ্গে যোগ করতে হবে আরও ৮০ কোটিকে, যাঁরা দারিদ্রসীমার প্রান্তে বসবাস করছেন। যে-কোনও সময়ে তাঁরা আবার হারিয়ে যেতে পারেন দরিদ্রদের ভিড়ে। এই ধরনের বিপন্ন মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনাটাই ভবিষ্যতের যে-কোনও উন্নয়ন কর্মসূচির সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এঁদের আলোয় ফেরাতে না-পারলে যে-কোনও উন্নয়ন কর্মসূচিই ব্যর্থ। রাষ্ট্রপুঞ্জের মতে, এঁদের জন্য কর্মসূচি হাতে নিলে বিশ্বের মোট আয়ের ২ শতাংশও খরচ হবে না। প্রশ্ন শুধু সচেতনতার।