রোজ দর বদলের গুটিগুটি পায়ে হেঁটেই নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের রীতিমতো ছেঁকা দিচ্ছে তেলের দাম। চিন্তায় ঘুম ওড়ার জোগাড় কেন্দ্রেরও। কারণ, তেলের দর এ ভাবে লাগাতার বাড়লে, আরও বেশি রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখে পড়বে তারা। মাথা তুলবে মূল্যবৃদ্ধি। আবার সাধারণ মানুষকে সুরাহা দিতে উৎপাদন শুল্ক ছাঁটাইয়ের পথ বাছলে, কঠিন হবে রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখা। ইতিমধ্যেই যা করতে গিয়ে কার্যত খাবি খাচ্ছে কেন্দ্র।
গত ১৬ জুন প্রতিদিন জ্বালানি তেলের দাম ঘোষণার নিয়ম চালুর পর থেকে পেট্রোলের দর শনিবারই সবচেয়ে বেশি। ডিজেলও তার সর্বোচ্চ উচ্চতায়। শুধু তা-ই নয়, ডিজেলের এই দাম ২০১৪ সালের ৩১ অগস্টের পরে সবচেয়ে বেশি। পেট্রোলও ২০১৫ সালের ১৬ মে-র পরে সব থেকে উপরে।
তেল সংস্থাগুলির যুক্তি, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়ার জন্যই দেশের বাজারেও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ছে। অশোধিত তেল ‘ব্রেন্ট ক্রুডে’র দাম বাড়তে বাড়তে ৭০ ডলার ছাড়িয়েছে। যা গত জুনেও ছিল ৫০ ডলারের নীচে। কিন্তু অনেকের প্রশ্ন—
• অশোধিত তেলের দর আগের তুলনায় বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু ইউপিএ জমানায় এক সময়ে তা ছিল ব্যারেলে ১০০ ডলারের উপরে। তখন বিজেপি প্রতিবাদ জানালেও এখন চুপ কেন? বিশেষত তেলের দর বাড়লে যেখানে পরিবহণ খরচ বৃদ্ধির কারণে আগুন হবে বাজারও।
• দাম কমার সময়ে উৎপাদন শুল্ক বাড়ানো হয়েছিল। তা হলে এখন কেন তা কমাচ্ছে না সরকার?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখানে বাধা রাজকোষ ঘাটতি। একেই অর্থনীতি ধাক্কা খাওয়ায় ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেঁধে রাখতে চ্যালেঞ্জের মুখে কেন্দ্র। তার উপর শুল্ক ছেঁটে সেই ঝুঁকি আর বাড়াতে পারছে না তারা।
জেএনইউ-র অর্থনীতির শিক্ষক সি পি চন্দ্রশেখরনের কথায়, বিশ্ব বাজারে তেলের দর কম থাকার সময়েই তার সুযোগ নিয়ে বাজারে চাহিদা চাঙ্গা করতে বাড়তি লগ্নি করা উচিত ছিল কেন্দ্রের। কিন্তু তখন সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার তারা করেনি।
ওয়েস্ট বেঙ্গল পেট্রোলিয়াম ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, এখন প্রতি লিটার ডিজেলে মোট প্রায় ২৪ টাকা ও পেট্রোলে ৩৩ টাকা মতো কর চাপায় কেন্দ্র ও রাজ্য। পেট্রোপণ্যে জিএসটি চালু হলে এই দর কমবে।