লোকসভা ভোটের শেষ দফার নির্বাচন ছিল ১৯ মে। তার পর থেকে দশ দিনের মধ্যে আট দিনই বেড়েছে তেলের দাম। যা দেখে অনেকের আশঙ্কা, বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোটের সময়ে থমকে থাকার পরে নির্বাচন মিটতেই যে ভাবে তেলের দর বেড়েছিল, এ বারও সে রকমই হবে না তো? তেলের দাম বাড়ার জেরে ছেঁকা লাগবে না তো সাধারণ মানুষের পকেটে?
এমনিতে বাজারের হাতে তেলের দাম ছেড়ে দেওয়ার পরে পেট্রল, ডিজেল বাড়া-কমা নির্ভর করে বেশ কিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের উপরে। তার মধ্যে যেমন রয়েছে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল এবং জ্বালানির দামে উত্থান-পতন, তেমনই ভারতে ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম। তার উপরে গত এক বছরে আমেরিকা-চিন শুল্ক যুদ্ধ, ইরান ও ভেনেজুয়েলার মতো দেশে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, ইরানের তেল আমদানিতে ভারতকে আমেরিকার দেওয়া ছাড় তোলা, মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় ইউরোপে রাশিয়ার তেল সরবরাহ বন্ধ থাকার মতো ঘটনায় জোগানে টান পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার অশোধিত তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দৈনিক ১২ লক্ষ ব্যারেল তেল কম উৎপাদন করছে তেল রফতানিকারীদের সংগঠন ওপেক ও তাদের সহযোগী কিছু দেশ।
অনেকে বলছেন, এই পরিস্থিতিতে সব কিছু বিচার করলে এখন তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়া হয়তো স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু ভোটের মধ্যে বেশিরভাগ দিন দাম কমেছে। আবার হাতে গোনা কয়েক দিন দর বাড়লেও, তা বৃদ্ধির গতি যতটা ছিল, তার তুলনায় কমার গতি ছিল অনেকটাই বেশি। হিসেব বলছে, ১১ এপ্রিল ভোট শুরুর পর থেকে ১৯ মে পর্যন্ত নিট হিসেবে পেট্রল কমেছে লিটারে ১.৭১ টাকা ও ডিজেলের ১৪ পয়সা। কিন্তু ১৯ মে-র পরে ন’দিনের মধ্যে আট দিনেই পেট্রল বেড়েছে ৮১ পয়সা। ডিজেল ৭৪ পয়সা। ফলে তাঁদের আশঙ্কা, ভোটের সময়ে যদি দরের ঊর্ধ্বগতি ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়ে থাকে, এ বার হয়তো তা দৌড় শুরু করবে। যার সূত্রপাত ইতিমধ্যেই হয়েছে।
ভোটের সময়ে থমকে থাকা দাম নির্বাচন মিটতেই বাড়ার ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগে কর্নাটক, গুজরাত, পঞ্জাব, গোয়া, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, মণিপুরের ভোটের সময়ে হয় দাম একই ছিল বা কার্যত বাড়েনি। যেমন, গত বছরে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম ব্যারেলে প্রায় ৫ ডলার বাড়লেও, কর্নাটক বিধানসভা ভোটের আগে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি ১৯ দিন দাম বাড়ায়নি। কিন্তু ভোট মিটতেই প্রায় ১৬ দিন টানা পেট্রল, ডিজেল বেড়েছিল। প্রায় একই ছবি দেখা যায় ২০১৭-এ গুজরাত নির্বাচনের সময়েও। সেই অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট মহলের অনেকেরই অভিযোগ, ভোটের সময়ে ব্যালট বাক্সে আমজনতার ক্ষোভের আঁচ এড়াতেই তেল সংস্থাগুলিকে প্রয়োজনে দাম না বাড়ানোর নির্দেশ দেয় কেন্দ্র। যার জের পরে ভোট মিটতেই। তখন দৌড়তে থাকে দর। এ বারও সে রকমই কিছু হতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।
এ দিকে মঙ্গলবার কুয়েতের তেলমন্ত্রী খালেদ আল-ফাদেল বলেন, তেলের মজুত ভাণ্ডার কমছে। চাহিদাও যথেষ্ট। এই পরিস্থিতিতে ওপেক উৎপাদন ছাঁটাই চালু রাখায়, জোগান কমার হাত ধরে এ বছরের মাঝামাঝি বা শেষ দিকে বাজারে ভারসাম্য আসবে বলে আশা তাঁর।