এ বার থেকে সারা দেশেই মাসের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ শনিবার বন্ধ থাকবে সমস্ত ব্যাঙ্ক। আর পুরো সময় খোলা থাকবে বাকি শনিবারগুলিতে। ফলে এত দিন ধরে প্রতি শনিবার অর্ধ-দিবস ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকার যে-নিয়ম চালু ছিল, তা এ বার উঠে গেল।
সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ছাড়াও কিছু বেসরকারি এবং বিদেশি ব্যাঙ্কের জন্য যে-নতুন বেতন সংশোধন চুক্তি সই হয়েছে, তাতেই ওই শর্ত রাখা হয়েছে। তবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যে-সব বেসরকারি এবং বিদেশি ব্যাঙ্ক ওই চুক্তির আওতায় পড়ছে না, সেখানেও ওই দুই শনিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে। এ ব্যাপারে খুব শীঘ্রই বিজ্ঞপ্তি জারি করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এই বেতন চুক্তি এ দিন মুম্বইতে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সংগঠন ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ) এবং ব্যাঙ্ককর্মী ও অফিসারদের সংগঠন ইউনাইটেড ফোরাম অব ব্যাঙ্ক ইউনিয়ন্স (ইউএফবিইউ)-এর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়। ইউএফবিইউ-র আওতায় ব্যাঙ্ক শিল্পের কর্মী এবং অফিসারদের ৯টি সংগঠন রয়েছে। ইউএফবিইউ-র শরিক অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের (এআইবিইএ) সভাপতি রাজেন নাগর বলেন, ‘‘এই চুক্তির ফলে সারা দেশে ৫ লক্ষ ব্যাঙ্ককর্মী এবং ৩ লক্ষ অফিসার উপকৃত হবেন।’’
প্রসঙ্গত, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আইবিএ এবং ইউএফবিইউ-র মধ্যে সই হওয়া প্রাথমিক চুক্তিতেই মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ শনিবার ব্যাঙ্ক বন্ধের ব্যাপারে দু’পক্ষ রাজি হয়েছিল। তবে যে-সব বিদেশি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক চুক্তির আওতায় নেই, এই নিয়ম তারা মানবে কি না, তা নিয়ে তখন সংশয় ছিল। সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়ে দিয়েছে, সব ব্যাঙ্কেই এ ব্যাপারে একই নিয়ম চালু করতে হবে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ দিন ধরেই ব্যাঙ্ককর্মীরা সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করার নিয়ম চলুর জন্য দাবি করে আসছিলেন। এ বার সেই দাবির অন্তত অর্ধেকটা তাঁরা আদায় করতে পেরেছেন বলে দাবি করেন রাজেনবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের চুক্তির আওতায় যে-ব ব্যাঙ্ক পড়ছে, সেগুলি তো বটেই, এমনকী যারা আমাদের এই চুক্তি মানতে বাধ্য নয়, তাদেরও মাসের দ্বিতীয় এবং চতুর্থ শনিবার ব্যাঙ্ক বন্ধ রাখতে হবে।’’
ব্যাঙ্ক শিল্পে বেতন সংশোধন চুক্তি এ দিন স্বাক্ষর হওয়ার সুবাদে কর্মী এবং অফিসারদের ১৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি হবে। প্রতি মাসে তাঁরা যা বেতন পান, তার ভিত্তিতেই হিসাব করা হবে ওই বৃদ্ধি। এর আগের চুক্তিতে অবসরকালীন সুবিধা-সহ বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি হিসাব করা হত। এ বার বেতন বৃদ্ধি এবং অবসরকালীন সুবিধা বৃদ্ধির হিসাবকে পৃথক করে দেওয়া হয়ছে। অর্থাৎ, বেতন বৃদ্ধির ফলে প্রভিডেন্ট ফান্ড, পেনশন এবং গ্র্যাচুইটি খাতে যা বাড়বে, তার হিসাব আলাদা ভাবে পাবেন কর্মী এবং অফিসারেরা। এই চুক্তির আওতায় ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পাশাপাশি রয়েছে ১১টি বেসরকারি এবং ৫টি বিদেশি ব্যাঙ্ক।
তবে নতুন এই চুক্তিতে একেবারেই সন্তুষ্ট নন বিভিন্ন ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মীদের সংগঠন বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিশনের ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি অমল ঘোষ অভিযোগ করেছেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের মতো মূল্য সূচকের সঙ্গে তাল রেখে পেনশন বাড়ানোর দাবি করেছিলাম। কিন্তু সে ব্যাপারে নতুন চুক্তিতে কিছুই বলা হয়নি। এ ছাড়া, পরিবারিক পেনশনের হার বৃদ্ধি এবং ২০০২ সালের আগে যাঁরা অবসর নিয়েছেন, তাঁদের মহার্ঘ ভাতা বাড়ানোর ব্যাপারে আমাদের দাবিও অগ্রাহ্য করা হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদে আন্দোলন করব।’’
এ ব্যাপারে অবশ্য রাজেনবাবু জানিয়েছেন, ‘‘এই বেতন সংশোধন চুক্তিতে অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ককর্মীদের দাবিদাওয়াগুলি নিয়ে কিছু করা সম্ভব হয়নি। তবে এ সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’’