একটু স্বস্তি। সামনে চিন্তাও।
রাজ্যসভায় উত্তীর্ণ। পণ্য-পরিষেবা করের (জিএসটি) হার নিয়ে সব রাজ্য ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য তৈরিই এখন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।
কোন ব্যবসায়ীদের উপর কেন্দ্রের নজর থাকবে, কাদের উপর শুধু রাজ্যের— সকলকে একমত করতে হবে এমন বিভিন্ন বিষয়ে। তা ছাড়া, অনেক রাজ্যের আবার নিজস্ব সমস্যা ও দাবিদাওয়া আছে। সেই সব নিয়েও আলোচনায় বসতে হবে কেন্দ্রকে।
বৃহস্পতিবার রাজস্ব সচিব হাসমুখ অদিয়া বলেন, সামনে এখন বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ। তাঁর কথায় সেগুলি হল— (১) জিএসটি চালুর পরে পাঁচ বছর রাজ্যগুলির যাবতীয় ক্ষতি মেটাতে রাজস্ব আয় কত হওয়া দরকার, তা হিসেব করা (২) জিএসটির কাঠামো তৈরি (৩) ছাড় দেওয়া হবে, এমন পণ্যের তালিকা তৈরি (৪) জিএসটি বিল নিয়ে ঐকমত্য (৫) অন্তত কত টাকার ব্যবসা জিএসটির আওতায় আসবে, তা ঠিক করা (৬) কেন্দ্র ও রাজ্যের নজরদারির সীমানা ঠিক করা ইত্যাদি।
জেটলির লক্ষ্য, শীত অধিবেশনে জিএসটি বিল পাশ করানো। সেখানে নতুন কর ব্যবস্থার খুঁটিনাটি থাকবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করের হার। এক দিকে কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা হার কম রাখতে চাপ দেবে। কেন্দ্রও চাইবে না, হার বেশি হওয়ায় মূল্যবৃদ্ধি মুখ তুলুক। উল্টো দিকে, রাজস্ব আদায় যাতে না কমে, তা-ও দেখতে হবে কেন্দ্রকে।
জেটলিরা জানেন, দাম বাড়লে, রাজনৈতিক ক্ষতি সইতে হবে তাঁদেরই। তাই বিষয়টি নজরে রাখছেন তাঁরা। বিশেষত পরিষেবার দিকটি। অনেকেরই আশঙ্কা, জিএসটি চালু হলে, রেস্তোরাঁয় খাওয়া থেকে মোবাইলের বিল— অনেক কিছুরই দাম বাড়বে। এখন এগুলিতে কর বসে ১৪%। সেস নিয়ে ১৫%। কিন্তু জিএসটির হার ১৮% বা তার বেশি হলে, তাদের দাম বাড়বে।
এখন ৬৫% পণ্যে কেন্দ্র-রাজ্য মিলিয়ে ২৭% কর চাপে। কিন্তু কংগ্রেস জিএসটির সর্বোচ্চ হার ১৮% রাখতে অনড়। জেটলির দাবি, ‘‘বহু রাজ্য নিজের রাজকোষের কথা ভেবে ২২-২৪% করের দাবি তুলছে।’’ তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েনের প্রশ্ন, ‘‘জিএসটির দ্রুত রূপায়ণ চাই। কিন্তু কংগ্রেস শীত অধিবেশনে সমর্থন দেবে কি?’’
অধিকাংশ রাজ্যের মত, ১০ লক্ষ টাকার কমের ছোট ব্যবসা জিএসটির বাইরে থাকুক। কিন্তু কিছু রাজ্য চায় তা ২৫ লক্ষ করতে। কেন্দ্র ও রাজ্যের নজরদারির সীমা ঠিক করা নিয়েও দ্বিমত রয়েছে। অদিয়ার বক্তব্য, ‘‘ব্যবসায়ীকে কর মেটাতে কেন্দ্র ও রাজ্য দু’তরফের কাছেই জবাবদিহি করতে হোক, তা চাই না।’’
অর্থ মন্ত্রক চায়, রাজ্যসভায় সংবিধান সংশোধনী বিলে যে সব পরিবর্তন হয়েছে, আগামী সপ্তাহেই সেগুলি লোকসভায় পাশ করিয়ে রাজ্যগুলির কাছে পাঠাতে। যাতে দ্রুত সিলমোহর মেলে। কিন্তু সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির মতে, এত সহজে তা হবে না। কারণ প্রায় প্রত্যেক রাজ্যেরই নিজস্ব দাবি আছে।
যেমন, পশ্চিমবঙ্গ চায় দেড় কোটি টাকার কমের ব্যবসায় কেন্দ্রের নজরদারি না থাকুক। ওড়িশার দাবি, খনিজ সমৃদ্ধ রাজ্যের জন্য পরিবেশ কর তুলে দেওয়া। মহারাষ্ট্রের উদ্বেগ মুম্বই পুরসভার প্রবেশ কর উঠে গেলে বিপুল ক্ষতি নিয়ে। তামিলনাড়ুর দাবি, রাজ্যের হাতে কর বসানোর ক্ষমতা। উত্তরপ্রদেশের সওয়াল, গরিবদের কথা ভেবে করের হার কম রাখা। হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুর মতো শিল্পোন্নত রাজ্যের দাবি, আর্থিক ক্ষতিপূরণ মেটানো। কেরল, ত্রিপুরা আবার চায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে কেন্দ্রের সহযোগিতার আশ্বাস।
সব সামলে ১ এপ্রিলের মধ্যে জিএসটি চালু হবে? জেটলির দাবি, সেই লক্ষ্যের পিছনেই দৌড়চ্ছেন তাঁরা।