প্রতীকী ছবি।
ভারতের উচ্চ মূল্যের নোট কোনটি? এই প্রশ্ন করলে অনেকেই বলবেন দু’হাজার টাকার নোটের কথা। ২০১৬ সালে নোটবন্দির পর উচ্চ মূল্যের ওই নোটটি বাজারে আনে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)। কিন্তু, বর্তমানে সংশ্লিষ্ট নোটটি আর প্রচলিত নেই। ২০২৩ সালের ১৯ মে দু’হাজারি নোট প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। যদিও লেনদেনের ক্ষেত্রে গোলাপি রঙের ওই নোটের এখনও বৈধতা রয়েছে।
ভারতের বাজারে যখন আনা এবং আধুলির মতো পয়সা চালু ছিল, তখনও উচ্চ মূল্যের নোট ইস্যু করতে পিছপা হয়নি সরকার। আরবিআইয়ের নথি অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত জারি করা সর্বোচ্চ মূল্যের টাকা হল ১০ হাজারি নোট। ব্রিটিশ ভারতে ওই নোটটি চালু ছিল এবং স্বাধীনতার মুখে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
১৯৩৮ সালে ভারতের বাজারে আসে ১০ হাজার টাকার নোট। এর ঠিক এক বছরের মাথাতেই (পড়ুন ১৯৩৯ সাল) বেঁধে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধ। ইউরোপে লড়াই শুরু হতেই এ দেশে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে কালোবাজারি। এতে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। ফলে উচ্চ মূল্যের নোট বন্ধ করার ব্যাপারে শুরু হয় চিন্তাভাবনা। যদিও যুদ্ধের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি তাঁরা।
১৯৪৫ সালের ৬ এবং ৯ অগস্ট জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু হামলার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এর পাঁচ মাসের মাথায় ১৯৪৬ সালের জানুয়ারিতে ভারতের বাজারে ১০ হাজার টাকার নোট বাতিল করে ব্রিটিশ সরকার। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার সাত বছর পর ফের ওই উচ্চ মূল্যের নোট চালু করে কেন্দ্র।
১৯৫৪ সালে ঘরোয়া বাজারে আসে ১০ হাজার এবং পাঁচ হাজার টাকার নোট। মূলত, বৃহৎ ব্যবসায়িক লেনদেনের কথা মাথায় রেখে ওই সময় উচ্চ মূল্যের নোটগুলি চালু করেছিল সরকার। গত শতাব্দীর ’৭০-র দশকের শেষের দিকে কালো টাকা উদ্ধারে বিমুদ্রাকরণের সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। এর ফলে ১৯৭৮ সালের ১৬ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে বাতিল হয় ১০ হাজার এবং পাঁচ হাজারি নোট।
২১ শতকে ফের ১০ হাজার এবং পাঁচ হাজারি নোট চালু করার প্রস্তাব দেন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন। কিন্তু, তা পত্রপাঠ খারিজ করে দেয় পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি (পিএসি)। তবে সংশ্লিষ্ট কমিটি থেকে দু’হাজারি নোট চালু করার অনুমতি মিলেছিল। সেইমতো ২০১৬ সালের ১৮ মে দু’হাজারি নোট বাজারে আনে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক।
২০১৫ সালে রামকুমার নামের সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দুবাইবাসী এক ভারতীয় তাঁর কাছে ১০ হাজার টাকার নোট রয়েছে বলে দাবি করেন। ফলে সর্বত্র হইচই পড়ে গিয়েছিল। আরবিআইয়ের সূত্রকে উদ্ধৃত করে গাল্ফ নিউজ় জানিয়েছে, ১৯৭৮ সালে নোটবন্দির আগে ভারতীয় বাজারে ১০ হাজারি নোটের সংখ্যা ছিল ৩৪৬। বর্তমানে বিরল ওই নোট ১০টিও পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।