এ বারের এবং আগামী বছরের বাজেটের দূরত্ব ৮ মাসেরও কম। নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে খুব একটা সময় পায়নি পরিকল্পনামাফিক বাজেট তৈরি করার। পরের বাজেটে স্পষ্ট ভাবে প্রকাশ পাবে সরকারের দীর্ঘকালীন পরিকল্পনার রূপরেখা। প্রত্যক্ষ কর বিধি ও পণ্য-পরিষেবা কর চালু করার প্রস্তাব থাকতে পারে আগামী বাজেটে, অর্থাৎ ২০১৫-’১৬ সালের বাজেট দেশের কাছে হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বাজেট বাজারের, বিশেষত বিদেশি লগ্নিকারীদের পছন্দ হলে এবং সেই সঙ্গে দেশে উৎপাদনের অগ্রগতির ধারা বজায় থাকলে শেয়ার বাজার এখনকার থেকে আরও বেশ খানিকটা উপরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি রাখে।
আর এই কথা মাথায় রেখেই বর্তমান বাজারে সময় বুঝে বাছাই করে ইকুইটিতে লগ্নি করা চলে। একলপ্তে লগ্নি না-করে এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করলে ঝুঁকি কম থাকবে।
শেয়ার বাজার তেতে ওঠায় ধীরে ধীরে নতুন ইস্যুর বাজারে প্রাণ ফেরার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি বাজারে আসা স্নোম্যান লজিস্টিক্স ইস্যুতে আবেদন জমা পড়েছে প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় ৬০ গুণ। খুচরো আবেদনকারীদের জন্য রাখা শেয়ারের জন্য আবেদন পাওয়া গিয়েছে ৬ গুণ। শেয়ারের এতটা চাহিদা থাকায় বাজারে প্রথম নথিবদ্ধ হওয়ার পরে এই শেয়ার হাতবদল হয়েছে ইস্যুর দামের তুলনায় ৭০% প্রিমিয়ামে।
মে মাসে বাজারে এসেছিল ওয়ান্ডেরিলা হলিডেজ। সাফল্য পেয়েছিল এই ইস্যুটিও। ১২৫ টাকায় ইস্যু করা এই শেয়ারটি এখন বাজারে বিকোচ্ছে ৩১০ টাকার উপরে। নতুন ইকুইটি ইস্যুতে এই ধরনের লাভের সন্ধান পেলে আরও বেশি লগ্নিকারীরা ফের আইপিও-র বাজারে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এতে উৎসাহিত হবে বহু সংস্থা, যারা অনেক দিন থেকে অপেক্ষা করছিল ভাল বাজারের জন্য। মনে করা হচ্ছে, এ রকম চাঙ্গা বাজারে সরকারের বিলগ্নিকরণের পথও সুগম হবে।
ভারতে লাল ফিতের ফাঁস এবং বিভিন্ন অনুমোদন পেতে দেরি হওয়া নিয়ে দিন কয়েক আগে অভিযোগ জানিয়েছিল বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল পরিষেবা সংস্থা ভোডাফোন। শুক্রবার এ দেশে ব্যবসার ব্যাপারে মোটামুটি একই মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে বিশ্বের তাবড় গাড়ি নির্মাতাদের। হোন্ডা এবং জেনারেল মোটরস-সহ কয়েকটি বিদেশি সংস্থার অভিযোগ, ভারতে ব্যবসার অনুমোদন, কর সংক্রান্ত সমস্যা, পরিকাঠামো তৈরি, আনুষঙ্গিক ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। তবে এদের আশা, মোদী সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিষয়গুলি আগামী দিনে অনেকটাই সহজ এবং স্বচ্ছ করা হবে। এ দেশে সরাসরি বিদেশি লগ্নি বৃদ্ধির জন্য লাল ফিতের ফাঁসকে সবুজে রূপান্তর করা অত্যন্ত জরুরি।
সপ্তাহ শেষে অবশ্য বাজার পেয়েছে একটি খারাপ খবর। জুলাই মাসে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে মাত্র ০.৫% হারে। এপ্রিল, মে এবং জুনে এই হার ছিল যথাক্রমে ৩.৪, ৫.০ এবং ৩.৯%। আশঙ্কা, এই পরিসংখ্যানের ধাক্কা পৌঁছতে পারে জাতীয় উৎপাদনের ঊর্ধ্বগতিতে। তবে একই সঙ্গে উৎসবের মরসুমে বিক্রি ও উৎপাদন বাড়তে পারে বলে আশা।
অন্য দিকে, অগস্ট মাসে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭.৮%, যা আগের মাসের তুলনায় (৭.৯৬%) সামান্য কম। এর প্রভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আগামী ঋণনীতিতে সুদ কমাবে, সেই সম্ভাবনা অবশ্য নেই। ৩০ সেপ্টেম্বর ঋণনীতির পর্যালোচনা করবে ভারতের শীর্ষ ব্যাঙ্ক। এগুলির পাশাপাশি আর একটি গুরুত্বপূর্ণ খবর হল, এপ্রিল থেকে অগস্ট, এই পাঁচ মাসে দেশের পরোক্ষ কর সংগ্রহ বেড়েছে ৪.৬%।
গত সপ্তাহে বাজার কিছুটা নামলেও সেনসেক্স ২৭,০০০ অঙ্কের উপরেই আছে। নিফ্টি ৮,১০০-র উপরে। ডলারের দাম কিছুটা বাড়লেও সোনার দর আরও পড়েছে। পুজোর মুখে সুখবর, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমেছে বেশ খানিকটা। এর জেরে কমতে পারে ডিজেলের দাম। দেশ ও শেয়ার বাজারের পক্ষে যা স্বস্তির ইঙ্গিত।