দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে। মাথায় প্রায় ৮,৫০০ কোটি টাকার ঋণের বোঝা। গত সপ্তাহে বন্ধ করতে হয়েছে পরিষেবা। এই অবস্থায় কলেবর কমিয়ে নতুন করে যাত্রা শুরুর পরিকল্পনা করছে জেট এয়ারওয়েজ।
পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের আশা, জেট পুনরুজ্জীবনের জন্য কোনও না কোনও সংস্থা পুঁজি জোগাবেই। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেই লগ্নি আসার পরে ৩০-৩২টি বিমান নিয়ে শুরু হবে নতুন যাত্রা। এর মধ্যে তিন-চারটি বড় বিমান মুম্বই-দিল্লি থেকে লন্ডন ও আমস্টারডামের মতো রুটের জন্য রাখা হতে পারে। তাঁদের আশা, ঠিক মতো চালাতে পারলে যা থেকে বছরে প্রায় ৫,০০০ কোটি টাকা মুনাফা হবে।
এ ছাড়াও সিঙ্গাপুর, ব্যাঙ্কক, দুবাইয়ের মতো ছোট আন্তর্জাতিক রুটে উড়ান চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বাকি বিমান ব্যবহার হবে ভারতে মূলত লাভজনক ঘরোয়া রুটে। এখন জেটের নিজস্ব ১৬টি বিমান রয়েছে। বাকিগুলি ভাড়া নেওয়া হবে। ঘরোয়া রুটে শুধু ইকনমি শ্রেণির আসন নিয়ে বিমান চালানো হবে কি না, তা নিয়েও শুরু হয়েছে আলোচনা। মনে করা হচ্ছে সে ক্ষেত্রে দৈনন্দিন খরচ কমিয়ে মুনাফা বাড়ানো সম্ভব।
জেট কর্তাদের দাবি, পরিকল্পনা ঠিকমতো কার্যকর করতে পারলে ত্রৈমাসিকে ১,২০০ কোটি টাকা মুনাফা করা যাবে। সে ক্ষেত্রে সংস্থার দেনা দু’বছরের মধ্যেই শোধ হবে। যদিও পুরোটাই নির্ভর করবে মে মাসে কত টাকা লগ্নি হচ্ছে, তার উপরে।
তবে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, আগেই খরচ কমানোর কথা ভাবা হয়নি কেন? কেনই বা অলাভজনক রুট বন্ধ করে কলেবর কমানো হয়নি?
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, দেশের সবচেয়ে পুরনো বেসরকারি বিমান সংস্থাটি ২৫ বছর ধরে পরিষেবা দিচ্ছে। প্রতিযোগিতায় এগোতে তারা টানা উড়ান বাড়িয়েছে। পা রেখে বিদেশে। কিনেছে চড়া দামের স্লট। লিজ নিয়েছে বিমান। বেশি বেতনে পাইলট, ইঞ্জিনিয়ারও নিয়োগ করতে হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে বেড়েছে বহর। এখন তা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সংস্থা।
এই প্রসঙ্গে শোনা যাচ্ছে টাকা নয়ছয়ের কথাও। অভিযোগ উঠেছে, জেটকে বাইরে থেকে নানা পরিষেবা দিচ্ছিল এমন বেশ কয়েকটি সংস্থাকে সাম্প্রতিক অতীতে প্রচুর টাকা দেওয়া হয়েছে। যাদের মালিকানা ছিল জেটের মালিকপক্ষের ঘনিষ্ঠদের হাতেই।
ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে জেটের কর্মী সঙ্কোচন হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। সে ক্ষেত্রে উচ্চ বেতনের কর্মীদের সংস্থা ছাড়তে হতে পারে। জেট কর্তাদের একাংশের মতে, নরেশ গয়ালের হাতে থাকাকালীন ছাঁটাই হলে দায় তাঁর ঘাড়ে পড়ত। কর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয় গয়াল তা চাননি। এখন তাঁর অনুপস্থিতিতে কর্মী ছাঁটাইয়ের পরে গয়ালের ফেরার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।