একটি ম্যারাথন দৌড়ের পরে সূচক মুখ ঘুরিয়েছে শুক্রবার।
বাজারের নিয়মে এই পতন খুবই স্বাভাবিক। যা ক্রেতাদের সুযোগ করে দেয় নতুন করে বাজারে প্রবেশ করার। ক্রেতারা ভিড় জমালে বাজার আবার উঠবে। ওঠার যথেষ্ট ইন্ধনও মজুত রয়েছে। প্রথম ত্রৈমাসিকের কোম্পানি ফলাফল এখনও পর্যন্ত ভালই হয়েছে। মোদী সরকারের উপর আস্থা রেখে বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসায় ছেদ পড়েনি। দেশে বর্ষার ঘাটতিও অনেকটা কমেছে। নতুন সরকার শিল্পোন্নয়নে যে-সব পদক্ষেপ করছে, তা লগ্নিকারীদের পছন্দ হচ্ছে। সব মিলিয়ে পরিবেশ শেয়ার বাজারের পক্ষে অনুকূল। অর্থাৎ বিক্রির চাপটা কমলে বাজার আবার উপরে ওঠার প্রতিশ্রুতি রাখে।
ইনফোসিস এবং টিসিএস-এর পরে এ বার ভাল ফলাফল উপহার দিয়েছে আর এক অগ্রণী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা উইপ্রো। প্রথম তিন মাসে সংস্থার আয় ৯,৭৩৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১,২৪৫ কোটি টাকা। ৩০ শতাংশ বেড়ে নিট মুনাফা স্পর্শ করেছে ২,১০৩ কোটি। অন্য যে-সব সংস্থা ভাল ফল প্রকাশ করেছে তাদের মধ্যে আছে ইয়েস ব্যাঙ্ক, টিভিএস মোটর, এলঅ্যান্ডটি ফিনান্স, ইউকো ব্যাঙ্ক ইত্যাদি। তবে ৩০০ কোটি টাকা লাভ কমেছে এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের। ভাল বাজার এবং ভাল ফলাফলে ভর করে টিসিএস কোম্পানির শেয়ারের মোট বাজার দর ৫ লক্ষ কোটি টাকা ছাপিয়ে গিয়েছে। লম্বা দূরত্বে পিছনে ফেলেছে ওএনজিসি, রিল্যায়ান্স, আইটিসি, কোল ইন্ডিয়া এবং ইনফোসিসকে।
বৃষ্টিপাতের বেশ উন্নতি ঘটেছে গত কয়েক দিনে। ভারী বৃষ্টি হয়েছে মধ্য, পশ্চিম এবং দক্ষিণ ভারতে। ফলে ঘাটতি নেমেছে বেশ অনেকটাই। ১৫ জুলাই যেখানে ঘাটতি ছিল ৪৩ শতাংশ, সেখানে তা ২৩ জুলাই নেমে এসেছে ২৫ শতাংশে। কম বৃষ্টিপাতের কারণে খাদ্যপণ্য-সহ সামগ্রিক পণ্যমূল্য বৃদ্ধির যে-জোরালো আশঙ্কা ছিল, তার খানিকটা অবশ্যই কমবে। শিল্প ও বাজারের কাছে এটিই ভাল খবর।
ধীরে হলেও আর্থিক সংস্কারের যে-সব পদক্ষেপ সরকার নিচ্ছে, সেগুলিকে স্বাগত জানাচ্ছে দেশি ও বিদেশি লগ্নিকারীরা। গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বিমা শিল্পে বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করার প্রস্তাবকে কিছু শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন করেছে। মূল শর্ত হল, সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থার পরিচালনভার থাকবে ভারতীয় উদ্যোক্তাদের হাতে। আর যে-সব শর্ত আরোপ করা হতে পারে, তার মধ্যে আছে
(১) বিদেশি অংশীদারের ভোটের অধিকার ২৬ শতাংশে বেঁধে রাখা
(২) সংস্থার কর্ণধার (সিইও) নির্বাচনে বিদেশি অংশীদারের ভূমিকা থাকবে না এবং
(৩) সংস্থার পরিচালন পর্ষদে ভারতীয়রা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতে সংসদে বিমা বিল পাশ হলে বিমা শিল্পে ২০,০০০ কোটি টাকা থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত বিদেশি লগ্নির সম্ভাবনা থাকবে। এক এক করে শেয়ার বাজারে প্রবেশ করতে শুরু করবে বিমা সংস্থাগুলি।
অন্য দিকে, ইক্যুইটি নয় এমন সব প্রকল্পে (মূলত ঋণপত্র-নির্ভর প্রকল্প) নতুন কর আইন অতীত দিন থেকে কার্যকর হবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এক বার দেখে নেওয়া যাক এর ভাল-মন্দের দিকটা।
আগের নিয়ম অনুযায়ী কোনও ঋণপত্রে লগ্নি ১ বছর পর্যন্ত ধরে রাখার পরে ভাঙালে তাতে যা লাভ হত, তা মূলধনী লাভের মর্যাদা পেত এবং তার উপর কর ধার্য হত ১০ শতাংশ (মূল্যবৃদ্ধি সূচক প্রয়োগ না-করলে) অথবা ২০ শতাংশ হারে। এ বারের বাজেটে বলা হল, করের এই সুবিধা পেতে হলে লগ্নি ধরে রাখতে হবে কমপক্ষে ৩ বছর এবং কর দিতে হবে ২০ শতাংশ হারে। অর্থাৎ বাড়ল লগ্নির মেয়াদ এবং উঠে গেল ১০ শতাংশ করের সুবিধা। শুধু তা-ই নয়, বলা হল, এই নতুন আইন কার্যকর হবে ১ এপ্রিল থেকেই। অর্থাৎ অতীত থেকে (বাজেট পেশ করা হয়েছিল ১০ জুলাই)। শুক্রবার অর্থমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছেন, অতীত দিন থেকে নয়, এই নয়া আইন চালু হবে ১০ জুলাই থেকে। অর্থাৎ যাঁরা ১০ জুলাইয়ের আগে ঋণপত্র বিক্রি করেছেন, তাঁরা পুরনো নিয়মেই কর দেবেন।
জেটলির এই ঘোষণায় সমস্যার ‘ল্যাজের’ দিকটা রেহাই পেলেও ‘ধড়ের’ উপশম হল না। অর্থাৎ, যাঁরা পুরনো নিয়মের আকর্ষণে ১ বছরের বেশি এবং তিন বছরের কম মেয়াদের ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডে বিনিয়োগ করেছিলেন, তাঁরা ১০ জুলাইয়ের পরে তা বিক্রি করতে গেলেই নতুন নিয়মের খপ্পরে পড়ছেন। বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বলা যায়, যাঁরা ১০ জুলাইয়ের আগে ৩৬৬ দিন বা তার বেশি মেয়াদের এফএমপি-তে লগ্নি করেছিলেন, তাঁরা এখন তা ভাঙাতে গেলে হয়তো মূলধনী লাভকরের কোনও সুবিধাই পাবেন না। এই সুবিধা পেতে হলে লগ্নি ধরে রাখতে হবে কমপক্ষে ৩ বছর।
সমস্যা হল, এফএমপি প্রকল্পগুলি নির্দিষ্ট মেয়াদের হয়। ইচ্ছে করলেই তা বাড়ানো যায় না। নতুন নিয়মের কারণে কোনও ঋণপত্র বা ঋণপত্র-নির্ভর প্রকল্পে লগ্নি করে ৩ বছরের আগে ভাঙিয়ে লাভ হলে তার উপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হারে কর দিতে হবে। অর্থাৎ যাঁর উপর ৩০ শতাংশ হারে কর প্রযোজ্য, তাঁকে একই হারে কর দিতে হবে মূলধনী লাভের উপরেও। এর ফলে বড় রকমের আঘাত পাবে ঋণপত্র-নির্ভর মিউচুয়াল প্রকল্পগুলি। বিশেষ করে ছোট মেয়াদের এবং ৩ বছরের কম মেয়াদের এফএমপি প্রকল্পগুলি। যাঁরা ৩০ শতাংশ করের আওতায় পড়েন, তাঁরা ঋণপত্র-নির্ভর প্রকল্পে লগ্নি করলে তা যদি ৩ বছরের বেশি মেয়াদের প্রকল্পে লগ্নি করেন, তবেই লাভবান হবেন।