—প্রতীকী ছবি।
শিল্পপতি গৌতম আদানির থেকে কি ধীরে ধীরে মুখ ফেরাচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ড? তাঁর আটটি সংস্থায় সংশ্লিষ্ট তহবিলগুলি লগ্নি কমাতেই উঠল সেই প্রশ্ন। তালিকায় রয়েছে আদানি গ্রিন এনার্জি, আদানি এনার্জি সলিউশন্স, আদানি এন্টারপ্রাইজ়েস, এসিসি, অম্বুজা সিমেন্ট, আদানি টোটাল গ্যাস এবং আদানি পোর্টস। এ ছাড়া বিশেষ আর্থিক অঞ্চল (স্পেশাল ইকোনমিক জ়োন) ও সাংঘি ইন্ডাস্ট্রিজ়ের শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নেওয়ার প্রবণতা দেখা গিয়েছে মিউচুয়াল ফান্ডগুলির মধ্যে।
সেবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিলে সংশ্লিষ্ট তহবিলগুলি আদানি গ্রিন এনার্জির শেয়ারের পরিমাণ ১৬.৩৪ শতাংশ হ্রাস করে। ফলে সেটি ১.৩৭ কোটিতে নেমে আসে। গত মার্চে মিউচুয়াল ফান্ডগুলির কাছে আদানি গ্রিনের মোট স্টকের অঙ্ক দাঁড়িয়েছিল ১.৬৩ কোটি। একই ভাবে তারা আদানি গ্রিন সলিউশন্স এবং আদানি এন্টারপ্রাইজ়ের শেয়ারের পরিমাণ কমেছে যথাক্রমে ১১.৯৩ শতাংশ এবং ৫.৩৮ শতাংশ।
এ ছাড়া আদানি টোটাল গ্যাসের ক্ষেত্রে মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাগুলি মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে বিনিয়োগ কমিয়েছে ২.১৪ শতাংশ। সাংঘি ইন্ডাস্ট্রিজ় এক্সপোজ়ারের ক্ষেত্রে এই অঙ্ক প্রায় ২৭ শতাংশ। শুধুমাত্র আদানি পাওয়ার এবং আদানি উইলমার লিমিটেডে লগ্নি বৃদ্ধি করেছে যাবতীয় মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থা। এই দু’টিতে ২.৯৩ শতাংশ এবং ২.৫৭ শতাংশ বিনিয়োগ বাড়িয়েছে তারা।
বিশ্লেষকদের দাবি, আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলির থেকে মিউচুয়াল ফান্ডগুলির মুখ ফেরানোর নেপথ্যে একাধিক কারণ রয়েছে। তহবিলগুলির আর্থিক বিশ্লেষকদের দাবি, প্রথমত আদানি গোষ্ঠীর সংস্থাগুলির শেয়ারের দাম একই ধরনের পণ্য বা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সংস্থার চেয়ে বেশি রয়েছে। ফলে অন্য সংস্থায় লগ্নিতে লাভের সম্ভাবনা বাড়বে বলে মনে করছেন তাঁরা। এ ছাড়া ২০২৩ সালে শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে স্টক কেলেঙ্কারির অভিযোগ তোলে মার্কিন শর্ট সেলার ‘হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ’। ফলে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সেবির (সিকিউরিটিজ় অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া) আতশকাচের তলায় রয়েছে তার একাধিক সংস্থা।
পাশাপাশি, আমেরিকার আদালতে শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। সূত্রের খবর, বিষয়টি মেটানোর জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তাঁর সংস্থার পদস্থ কর্তারা। এই সমস্ত অভিযোগের জেরে আদানি গোষ্ঠীর স্টক দর হঠাৎ করে নিম্নমুখী হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আর সেই কারণেই সংশ্লিষ্ট তহবিলগুলি গুজরাতের শিল্পপতির দিক থেকে মুখ ফেরাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি, মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির বিষয়টি নিয়ে বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা অ্যাম্ফি (অ্যাসোসিয়েশন অফ মিউচুয়াল ফান্ডস ইন ইন্ডিয়া)। সেখানে বলা হয়েছে, অ্যাসেট আন্ডার ম্যানেজ়মেন্ট বা এইউএম (পড়ুন মোট লগ্নি) বৃদ্ধি পেয়েছে ২৩ শতাংশ। এ বছরের মার্চে ১২ লক্ষ কোটি টাকা বেড়ে তা ৬৫.৭৪ লক্ষ কোটিতে পৌঁছে গিয়েছে। গত বছরের মার্চে এইউএমের অঙ্ক ছিল ৫৩.৪ লক্ষ কোটি টাকা। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, মিউচুয়াল ফান্ডে মহিলা লগ্নিকারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মেট্রো শহরগুলির মধ্যে বিনিয়োগের নিরিখে প্রথম স্থানে রয়েছে মুম্বই। আর একেবারে নীচে আছে কলকাতার নাম।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি বাজারগত ঝুঁকিসাপেক্ষ। আর তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনেই সংশ্লিষ্ট ফান্ডে বিনিয়োগ করুন। এতে আর্থিক ভাবে লোকসান হলে আনন্দবাজার ডট কম কর্তৃপক্ষ কোনও ভাবেই দায়ী নয়।)