রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস সত্যি করেই নভেম্বরে ৫ শতাংশের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেল খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার। মূলত খাদ্যপণ্য এবং পেট্রোল- ডিজেলের দাম বাড়ার জেরে ওই সময়ে তা দাঁড়িয়েছে ৪.৮৮%। গত ১৫ মাসে যা সর্বাধিক। একই সঙ্গে অর্থনীতির পক্ষে খারাপ খবর বয়ে আনল শিল্প বৃদ্ধির হারও। অক্টোবরে তা কমে দাঁড়াল ২.২ শতাংশে। তিন মাসে সবচেয়ে কম।
গত সপ্তাহে ঋণনীতি পর্যালোচনা করার সময়েই মূল্যবৃদ্ধির হার বাড়া নিয়ে সতর্ক করেছিল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। জানিয়েছিল, বছরের দ্বিতীয় ভাগে তা দাঁড়াবে ৪.৩% থেকে ৪.৭%। যে কারণে ঋণনীতিতে সুদের হার কমায়নি তারা। অক্টোবরে ওই হার ছিল ৩.৫৮%। কিন্তু নভেম্বরের মূল্যবৃদ্ধি সেই পূর্বাভাসকেও ছাপিয়ে যাওয়ায় আগামী ঋণনীতি তো বটেই, পরের ছ’মাসেও সুদ ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা আরও কমলো বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
মূলত, খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধি খতিয়ে দেখেই ঋণনীতির গতিপথ স্থির করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ঋণনীতির সময়েই তারা জানিয়েছিল, অর্থবর্ষের শেষ দিকে মূল্যবৃদ্ধি বাড়বে বলে মনে করলেও, দীর্ঘ মেয়াদে তা ৪ শতাংশের মধ্যে বেঁধে রাখতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তারা। তবে মঙ্গলবারের এই পরিসংখ্যান তাদের চিন্তা আরও বাড়াবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
অন্য দিকে দেশে শিল্পের অবস্থা যে এখনও খুব একটা ভাল নয়, তা ফের স্পষ্ট করেছে অক্টোবরের শিল্পোৎপাদন। এ বার মূলত উৎপাদন শিল্পে কম হারে বৃদ্ধি (২.৫%) এবং টিভি, ফ্রিজের মতো ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন সরাসরি ৬.৯% কমে যাওয়াই শিল্পোৎপাদনের হার কমার অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছে সরকারি পরিসংখ্যান। গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ৪.২%। আর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ৪.১৪%।
অনেকেরই প্রশ্ন, কেন্দ্র যে এত ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়ার’ কথা বলে, তার পরেও শিল্পের দশা এমন বেহাল কেন? কেনই বা দীর্ঘ মেয়াদে মাথা তোলা সম্ভব হচ্ছে না তার পক্ষে? মোদী সরকারের যাবতীয় প্রতিশ্রুতি ও সংস্কারের ঘোষণা সত্ত্বেও কেন এখনও হাত গুটিয়ে বসে
দেশীয় বিনিয়োগকারীরা?
শিল্প বৃদ্ধি শ্লথ হওয়ায় ফের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বৃদ্ধি ঘিরে। টানা পাঁচ ত্রৈমাসিকে তা কমার পরে, জুলাই-সেপ্টেম্বরে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে তা হয়েছে ৬.৩%। শিল্পমহল বহু দিন ধরেই দাবি করছে, বৃদ্ধির চাকায় পুরোদস্তুর গতি ফেরাতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ কমানো জরুরি। একই সওয়াল বারবার করেছে কেন্দ্রও। কিন্তু এ বার মূল্যবৃদ্ধির এতখানি মাথাচাড়া দেওয়া সেই আশায় ফের একবার জল ঢালবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, শিল্পে প্রাণ ফিরছে না দেখেও এখন সুদ কমানো শক্ত হবে শীর্ষ ব্যাঙ্কের পক্ষে।