এ সপ্তাহে বাজার চলবে বাজেটের কথা ভেবেই

দু’দিনে সেনসেক্স ৯১৩ পয়েন্ট নামলেও, সূচক রণেভঙ্গ দিয়েছে বলে ভাবার কারণ নেই।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২১ ০৬:৪০
Share:

ফাইল চিত্র।

বড় মাইলফলক ৫০ হাজার ছুঁয়েও সেখানে অবস্থান করা গেল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই নেমে আসতে হল নীচের হাজারে। পতন চলল পরের দিনও। শুক্রবার ৭৪৬ পয়েন্ট নেমে সেনসেক্স দাঁড়াল ৪৮,৮৭৮ অঙ্কে। সপ্তাহের শেষ দু’দিনে বাজারের গতিপ্রৃকতি দেখে মনে হচ্ছে, ‘৫০ হাজার ছুঁলেই বিক্রিতে নামব’— এমন এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেছিলেন বহু মানুষ। গত এক মাসে যে গতিতে সূচক উঠেছে, তাতে অবশ্য বাজারের স্বাস্থ্যের জন্য এই পতন কাম্য ছিল।। ২১ ডিসেম্বর সেনসেক্স ছিল ৪৫,৫৫৪ অঙ্কে। মাত্র এক মাসে প্রায় ৫,০০০ পয়েন্ট উত্থানকে একটু বাড়াবাড়ি বলেই মনে হয়েছে অনেকের। তাই তাঁরা লাভের কড়ি ফেলে রাখতে চাননি। ওই দিন বিক্রির রাস্তায় নেমেছিল বিদেশি লগ্নিকারীরাও।

Advertisement

দু’দিনে সেনসেক্স ৯১৩ পয়েন্ট নামলেও, সূচক রণেভঙ্গ দিয়েছে বলে ভাবার কারণ নেই। বাজারে টাকার জোগান এবং শেয়ারের চাহিদা যথেষ্ট। অর্থাৎ সাময়িক সংশোধন পর্ব মিটলেই আবার সেনসেক্স, নিফ্‌টিকে উঠতে দেখব। তবে আগামী বেশ কিছু দিন বাজার বাজেটকেই মাথায় রেখে চলবে। লগ্নিকারীরা যে সতর্ক হচ্ছেন, সেটা গত সপ্তাহে তাঁদের তড়িঘড়ি হাতের শেয়ার বেচে মুনাফা তোলার সিদ্ধান্তেও কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে।

নতুন বছর সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করতে গিয়ে নভেম্বরে (যখন সেনসেক্স ৪২ হাজারের ঘরে ছিল) অনেকেই আশা প্রকাশ করেছিলেন ২০২১ সালে সেনসেক্স ৫০ হাজার ছুঁতে পারে। কিন্তু বছর শুরুর পরে মাত্র তিন সপ্তাহেই যে লক্ষ্য পূরণ হবে, তা চরম আশাবাদীরাও ভাবেননি। এতে উৎসাহিত হয়ে কেউ কেউ বলছেন, ৫-১০ বছরে সেনসেক্স লাখে পৌঁছলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বিশেষত বাজারের রেকর্ড দৌড়ের পাশাপাশি লগ্নিকারীর সংখ্যা এবং এক্সচেঞ্জে নথিবদ্ধ সব শেয়ারের মোট মূল্যও (মার্কেট ক্যাপ) যেখানে লাফিয়ে বেড়েছে। তেতে আছে নতুন ইসুর বাজারও। নতুন শেয়ার ছেড়ে (আইপিও) বেশ কিছু সংস্থা গত তিন মাসে বিপুল তহবিল জোগাড় করেছে। সম্প্রতি ইন্ডিগো পেন্টসের আইপিও-তে আবেদন জমা পড়েছে ১১৭ গুণ।

Advertisement

গত সপ্তাহে অক্টোবর-ডিসেম্বরের আর্থিক ফল বেরিয়েছে কিছু সংস্থার। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের নিট মুনাফা ১২% বেড়ে হয়েছে ১৩,১০৩ কোটি টাকা। জেএসডব্লিউ স্টিলের নিট লাভ
১৮৭ কোটি থেকে বেড়ে ছুঁয়েছে ২,৬৬৯ কোটি। বায়োকনের কমেছে ১৯%। ১,৭৩৯ কোটি টাকা ক্ষতির বদলে ৫১৪ কোটি মুনাফা করেছে ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক। বজাজ ফিনান্সের লাভ কমেছে ২৯%। লাভ কমেছে বন্ধন ব্যাঙ্কেরও। দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে আল্ট্রাটেক সিমেন্টের। বিড়লা কর্পের নিট লাভ বেড়েছে ৮২%।

আমরা এখন বাজেট বলয়ে। ১ ফেব্রুয়ারি তা সংসদে পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। নির্মলার দাবি, এই বাজেট হবে অভিনব। সেটা তো বটেই। কারণ, করোনার ধাক্কায় এই প্রথম অর্থনীতি সঙ্কুচিত হতে চলেছে প্রায় ৮%। নজিরবিহীন উচ্চতায় রাজকোষ ঘাটতি। চাহিদা বাড়াতে হবে। মানুষের আয়ের ব্যবস্থা
করতে হবে। কেন্দ্রের আয় বাড়াতে ও শিল্পের খরচ কমাতে হবে। মন্ত্রী এই চ্যালেঞ্জ কী করে সামলান, বাজার তা দেখার অপেক্ষায় দিন গুনছে।

পেট্রল, ডিজেলে চড়া হারে শুল্ক বসিয়ে কেন্দ্র মোটা টাকা সংগ্রহ করছে। কিন্তু এই পথে সম্ভবত আর এগোনো যাবে না। কারণ জ্বালানির চড়া দামে ইতিমধ্যেই ক্ষোভ বাড়ছে দেশবাসীর। বর্ধিত খরচ মেটাতে সরকার এ বার কোন পথে হাঁটে সেটাও এখন দেখার।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement