ফেব্রুয়ারির সূচনা শুভ হয়নি বাজারের পক্ষে। প্রথম দিন থেকে শুরু করে গত শুক্রবার পর্যন্ত বাজার দেখেছে ভাল রকম চড়াই-উতরাই।
শুরু হয়েছিল বাজেট ঘোষণাকে কেন্দ্র করে। বাজেট মনে না ধরায় তা পেশ হওয়ার পরে সেনসেক্স পড়েছিল ৫৮ পয়েন্ট। কিন্তু পরের দিন বাজার নামে ৮৪০ অঙ্ক। বাজেট ছাড়াও এই পতনের জন্য দায়ী ছিল মার্কিন মুলুকে বন্ডের ইল্ড বা প্রকৃত আয় বৃদ্ধি। পতনের ঝড় চলে তার পরেও। বুল-রা পায়ের তলায় সামান্য মাটি পায় গত বৃহস্পতিবার। ওই দিন ৩৩০ পয়েন্ট বাড়তে দেখা যায় সেনসেক্সকে। বেয়ার-রা ফের আঘাত হানে পরের দিন শুক্রবার। ওই দিন সেনসেক্স নতুন করে খোয়ায় ৪০৭ পয়েন্ট। থিতু হয় ৩৪,০০৬ পয়েন্টে।
অর্থাৎ ১ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেনসেক্স নেমেছে ১,৯৫৯ পয়েন্ট। এই পর্বে নিফটিও ১১,০২৮ থেকে নেমেছে ১০,৪৫৫ অঙ্কে। বাজারের পতন শেষ হয়েছে, এমন কথা কিন্তু এখনও হলফ করে বলা যায় না। গত কয়েক মাসে যে সব নতুন লগ্নিকারী বাজারে এসেছেন, তাঁরা ভাল পতনের সঙ্গে পরিচিত হলেন। মাথায় রাখতে হবে, বাজার একনাগাড়ে ওঠে না। নানা কারণে মাঝেমধ্যেই পতন হতে পারে।
তবে আমেরিকা থেকে আসা কোনও কারণে বাজারে পতন দেখা দিলে আতঙ্ক একটু দ্রুত ছড়ায়। টানা বুল-বাজারের পরে ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ব জুড়ে বাজারের পতন মানুষ এখনও ভুলতে পারেননি। অত্যধিক কম সুদে (সাব-প্রাইম রেট) গৃহঋণ দেওয়াকে কেন্দ্র করে যে গভীর সমস্যা তৈরি হয়, তা থেকে ঘনায় মন্দার মেঘ। যা থেকে বেরোতে অনেকটা সময় লাগে।
এ বার ব্যাপারটি অবশ্য উল্টো। কিছু দিন হল মার্কিন অর্থনীতিতে উন্নতির হাওয়া লেগেছে। বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। এই পরিস্থিতিতে সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটছে ওই দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ। ফলে পড়তে শুরু করেছে বন্ডের দর। বাড়ছে বন্ড ইল্ড। বন্ডের এই মূল্যপতনই ত্রাস সৃষ্টি করে বিশ্ব বাজারে। এর ঢেউ এসে লাগে ভারতে। এখানেও মূল্যবৃদ্ধি বাড়তে শুরু করায় সুদ নামার সম্ভাবনা কমেছে। বরং সৃষ্টি হয়েছে সুদ বাড়ার মতো পরিস্থিতি। এই অবস্থায় বন্ডের বাজার দর নেমে আসার কারণে বাড়ছে তার ইল্ড বা প্রকৃত আয়। যা শেয়ারের লগ্নিতে কোপ ফেলছে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। বন্ডের দাম কমতে থাকায় বিপাকে পড়বে অনেক ব্যাঙ্ক। কারণ, তাদের হাতে বহু টাকার বন্ড মজুত আছে।
যেমনটি ভাবা হয়েছিল, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এই দফায়ও সুদ একই রেখেছেন আরবিআই গভর্নর উর্জিত পটেল। পাশাপাশি পণ্যমূল্য বাড়তে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বাজারের পক্ষে এটি আদৌ শুভ নয়। এর ফলে অস্থিরতা বহাল থাকতে পারে বাজারে। শেয়ারে লগ্নির উপর নানা রকম কর চাপানোয় লগ্নি প্রবাহ মন্থর হচ্ছে বলে আরবিআইয়ের শীর্ষ কর্তা মন্তব্য করেছেন। এই অস্থির বাজারে মানুষকে সাবধানে চাল চালতে হবে। যাঁরা বড় মেয়াদের জন্য লগ্নি করেছেন, তাঁদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। বিভিন্ন সমীক্ষা ও কেন্দ্রের তরফে বলা হচ্ছে, ২০১৮-১৯ সালে বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের উপরেই থাকবে। বাস্তবে তা মিললে লগ্নির গন্তব্য হিসেবে ভারত প্রথম সারিতেই থাকবে। অর্থাৎ এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কারণ ঘটেনি। চলতি অর্থবর্ষের জন্য যাঁদের ইকুইটি নির্ভর ইএলএসএস প্রকল্পে এখনও লগ্নি করা হয়ে ওঠেনি, তাঁরা পড়তি বাজারে তা সেরে ফেলতে পারেন।
গত ১০ দিন ধরে উত্থান-পতনে যখন মানুষ জেরবার, সেই সময়ে অনেকেরই নজর এড়িয়ে গিয়েছে বেশ কয়েকটি সংস্থার আর্থিক ফল। দুর্বল বাজারে যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হানে স্টেট ব্যাঙ্কের তৃতীয় ত্রৈমাসিক ফলাফল। আগের বছর ব্যাঙ্ক ২,৬১০ কোটি টাকার মুনাফা ঘরে তুললেও, এ বার তাদের লোকসান ২,৪১৬ কোটি। অন্য দিকে পাঁচ গুণ লাভ বেড়েছে টাটা স্টিলের। আর ২২% এইচপিসিএলের।
স্টেট ব্যাঙ্কের পথ অনুসরণ করে খারাপ ফলাফল ঘোষণা করেছে ব্যাঙ্ক অব বরোদা এবং ইউকো ব্যাঙ্ক। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট শেয়ারের বাজার দরে। আগামী তিন দিনে শেষ হবে ফল প্রকাশের পালা। সঙ্গে দেওয়া হল সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু আর্থিক ফলাফল।