বাজারের ঢাল নিয়মিত লগ্নিই

পরপর বড় মাপের দু’টি সাইক্লোন এবং উত্তর কোরিয়ার হুমকি মার্কিন অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলেছে। কর্মহীনের পরিসংখ্যানও সেই কথাই বলছে। ফলে অনেকটাই পড়েছে ডলারের দাম।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:১৪
Share:

বাজার এখন বেশ অস্থির। দেশের ভিতর এবং বাইরের পরিস্থিতি এমন, যা তাকে নির্দিষ্ট দিশা দেখাতে পারছে না। ফলে সাময়িক প্রতিকূল খবরে কোনও দিন সূচক পড়ছে। পরদিনই আবার কিছুটা উঠছে কোনও ভাল খবর পেলেই। অর্থাৎ বুল এবং বেয়ারের লড়াই এখন মাঝমাঠে আটকে। কেউই কাউকে জমি ছাড়তে নারাজ। কেন এ রকম হচ্ছে, দেখে নেব এক নজরে।

Advertisement

সেনসেক্স ৩২ হাজার ও নিফ্‌টি ১০ হাজার পেরোনোর পর থেকেই লাভ ঘরে তুলতে একনাগাড়ে শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। অন্য দিকে, ব্যাঙ্কে সুদের হার কমায় এবং শেয়ার বাজার সর্বোচ্চ উচ্চতায় পা রাখায় মূলত মিউচুয়াল ফান্ডের পথে একটানা লগ্নি আসতে থাকে শেয়ার বাজারে। ফলে বিদেশি সংস্থাগুলি বিক্রি করে গেলেও, সূচকের পতন আটকে দিচ্ছে দেশের লগ্নিকারীরা। বাজারের স্থিতি-স্থাপকতার পক্ষে এটি ভাল লক্ষণ। শেয়ার বাজারে এখন নিয়মিত বড় লগ্নি আসছে ইকুইটি ফান্ড, ইএলএসএস, ইটিএফ, এনপিসি ইত্যাদি পথে।

পরপর বড় মাপের দু’টি সাইক্লোন এবং উত্তর কোরিয়ার হুমকি মার্কিন অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলেছে। কর্মহীনের পরিসংখ্যানও সেই কথাই বলছে। ফলে অনেকটাই পড়েছে ডলারের দাম। এই সাম্প্রতিক ধাক্কার দরুন ওই দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ এখনই সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তার উপর এই পরিস্থিতিতে মানুষ বেশি করে ঝুঁকছে সুরক্ষার স্বর্গ (সেফ হেভেন) সোনার দিকে। এই কারণে এই হলুদ ধাতুটির দাম হু-হু করে বেড়েছে গত কয়েক দিনে।

Advertisement

অন্য দিকে, ডলারের দাম অনেক দিন পর নেমে এসেছে ৬৪ টাকারও নীচে। ডলারের পতনে অবশ্য আঘাত আসতে পারে রফতানিপ্রধান তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থাগুলির উপর। মরগ্যান স্ট্যানলি কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড সংস্থা ইপিএফও এবং পেনশন ফান্ড এনপিএস-এর ইকুইটিতে লগ্নি সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা বেশ উৎসাহব্যঞ্জক। এই উপদেষ্টা সংস্থাটির মতে, ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে ইপিএফও শেয়ার বা ইকুইটিতে লগ্নি করতে পারে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে লগ্নি করা হয়েছে ৫,৭০০ কোটি। এ ছাড়া অনুমান করা হচ্ছে, শেয়ারে এনপিএসের লগ্নি পৌঁছে গিয়েছে ৩,৫০০ কোটি ডলার অর্থাৎ ২,২৪,০০০ কোটি টাকায়। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ইটিএফে লগ্নি হয়েছে ১৬,৯০০ কোটি টাকা। অগস্টে শেয়ার নির্ভর (ইকুইটি) ফান্ডে লগ্নি এসেছে ২০,০০০ কোটি টাকা। এটি একটি সর্বকালীন রেকর্ড।

অগস্টে মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পে মোট সম্পদের পরিমাণ পৌঁছে গিয়েছে ২০.৬ লক্ষ কোটি টাকায়। এটিও একটি নজির। গত মাসে বিদেশি লগ্নিকারীরা ১০,০০০ কোটি টাকার শেয়ার বেচলেও বাজার তেমন নামেনি ফান্ডগুলি ১৬,০০০ কোটি টাকার শেয়ার কেনায়। বিভিন্ন ফান্ডে এখন এসআইপি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা কম-বেশি ১.৫ কোটি। এই পথে প্রতি মাসে ফান্ডে লগ্নি হচ্ছে ৫,০০০ কোটি। এই সমস্ত হিসেব ভারতীয় বাজারের পক্ষে খুবই সদর্থক। আশা করা যায়, শেয়ারে এ রকম লগ্নি চলতে থাকলে বাজার কখনওই তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে না।

ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে সুদ ক্রমাগত কমতে থাকায় হালে সাধারণ মানুষ মিউচুয়াল ফান্ডকেই প্রধান বিকল্প হিসেবে দেখতে পাচ্ছেন। গত দু’বছর ফান্ডগুলির বেশ ভাল রিটার্ন দেওয়াও এই আকর্ষণের অন্যতম প্রধান কারণ। ইকুইটি লগ্নিতে ভাল রিটার্নের ব্যবস্থা করতে পেরেছে ইপিএফও এবং এনপিএস। বাজার ভাল থাকায় ইকুইটিতে লগ্নি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এলআইসি-সহ বিভিন্ন ভারতীয় অর্থ সংস্থাও। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে ভারতীয় বাজারের ভবিষ্যৎ ভালই বলতে হবে। তবে পাশাপাশি অর্থনীতিকেও ভাল করতে হবে। কমে আসা বৃদ্ধি আবার বাড়াতে হবে। আশা, নোট বাতিল ও জিএসটি-র ধাক্কা কাটিয়ে বৃদ্ধি আবার ৭% ছুঁতে পারে বছরের দ্বিতীয় অর্ধে।

পরিস্থিতি যত ভালই হোক, শেয়ার বাজারে ঝুঁকি থাকবে। ক্রিকেটের মতো অনিশ্চয়তা আছে বলেই তার এত আকর্ষণ। এই কারণে বহু সাবধানী মানুষ ১০০% ইকুইটির পথে নেমে হাত খুলে খেলতে চান না। অনেকেই বেছে নেন ব্যালান্সড ফান্ডের পথ। শেয়ারে লগ্নি করলে তা করেন এসআইপি পথে। এঁরা এক এক করে রান নিয়ে জিততে চান। চার ছয় মেরে নয়। সাফল্যও আসছে এই পথে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন