লক্ষ্য সকলের দরজায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। এমনকী রাজ্যের প্রত্যন্ত প্রান্তেও। অথচ বেসরকারি ব্যাঙ্ক তো দূর অস্ত্, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে যেতে হলেও পকেটের পয়সা খরচ করে জেলা সদরে যেতে হয় গ্রামের সাধারণ মানুষকে। মার যায় সারা দিনের রোজগারও। তার উপর আবার সেখানে গেলে অনেক সময় সঠিক পরিষবাও পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ বিস্তর। এ বার এই ছবি কিছুটা হলেও বদলাতে ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে রাজ্য। প্রায় ২,৬০০ কৃষি সমবায় উন্নয়ন সমিতির মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে কোর ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। নবান্ন সূত্রে খবর, সম্প্রতি তাতে সিলমোহর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
কৃষি সমবায় উন্নয়ন সমিতিগুলি জেলার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কের অধীনে থেকে এখন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যেমন আমানত সংগ্রহ করে, তেমন ক্ষুদ্র ঋণও দেয়। সমিতিগুলির ৯০ শতাংশ আমানত জমা থাকে কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্কে। গ্রামাঞ্চলের কৃষিজীবী মানুষ, ছোট ব্যবসায়ী, খেতমজুর, গৃহবধূরা মূলত এদের গ্রাহক। কিন্তু প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো এবং রাজ্যের অনুমতি না থাকায়, টাকা জমা রাখা ছাড়া আর কোনও ব্যাঙ্কিং পরিষেবা তারা দিতে পারে না। এ বার সেই ছবিই কিছু বদলাতে চাইছে রাজ্য। সরকারি সূত্রের খবর, গ্রামের মানুষের সঙ্গে এদের সরাসরি যোগ রয়েছে। আর সেই কারণেই এই কাজে তাদের বেছে নিতে চাইছে সরকার।
সমবায় দফতর সূত্রে খবর, রাজ্যে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কৃষি সমবায় সমিতি রয়েছে। তার মধ্যে পরিচালন ব্যবস্থায় যথেষ্ট দক্ষতা এবং স্বচ্ছতা রয়েছে, এমন ২,৬০০টি সমিতিকে প্রাথমিক ভাবে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দেওয়ার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ক্রেতার আশায় বাড়তি দিন
ঠিক হয়েছে, এই সমিতিগুলিরই পরিকাঠামো কোর ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দেওয়ার উপযুক্ত করে ঢেলে সাজানো হবে। যাতে আমানত সংগ্রহ, ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি এটিএম পরিষেবা, টাকা পাঠানোর মতো ন্যূনতম ব্যাঙ্কিং পরিষেবাগুলি তারা দিতে পারে।
থাকার কথা
• কম্পিউটার, ল্যাপটপ
• ইন্টারনেট সংযোগ
• শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিস
• গ্রাহকদের বসার জায়গা
• সমিতির নামে গ্লো সাইন বোর্ড
প্রাপ্য পরিষেবা
• টাকা জমা দেওয়া ও তোলা
• কৃষি এবং অন্যান্য ঋণ
• এটিএম পরিষেবা
• ভ্রাম্যমাণ এটিএম
• চেক ও পাসবই
• আরটিজিএস ও এনইএফটি পদ্ধতিতে টাকা পাঠানো
এ ছাড়াও
• রাজ্যে ব্যাঙ্কহীন গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা ৭৫০
• ২৫০টিতে রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কের শাখা খোলা হবে
• ইতিমধ্যে ১০টিতে চালু হয়েছে
একই সঙ্গে যেহেতু তাদের উপর কড়া নজরদারি প্রয়োজন, সেই কারণে সমিতিগুলির আর্থিক শৃঙ্খলার উপর চোখ রাখতে বিডিওদের মাথায় রেখে একটি করে কমিটিও গঠন করা হচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, আগামী আর্থিক বছর (২০১৯-২০) থেকে সমিতিগুলি গ্রামাঞ্চলের মানুষকে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা দিতে শুরু করবে।
রাজ্যের সমবায়মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের দরজায় ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া মুখ্যমন্ত্রীর লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করতেই সমিতিগুলির মাধ্যমে কোর ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি।’’
তিনি জানান, সমিতিগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে কেন্দ্রের কৃষি মন্ত্রকের অধীনে জাতীয় সমবায় উন্নয়ন নিগমের কাছ থেকে প্রয়োজনে ঋণ নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে বলেও দাবি করেছেন মন্ত্রী।
নবান্ন সূত্রে খবর, নিগমের কাছ থেকে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে রাজ্যের অনুমতি পাওয়া গিয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে, ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু হয়ে গেলে সমিতিগুলির লোকবল বাড়াতে সমবায় দফতরের অধীনে যে ২ লক্ষের বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে (যাদের সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০ লক্ষ), তাদের প্রকল্পটির সঙ্গে যুক্ত করে নেওয়া হবে। রাজ্যের আশা, এর হাত ধরে গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ যেমন বাড়বে, তেমনই অনাদায়ী ঋণও বৃদ্ধি পাবে না। কারণ স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিই সমিতির হয়ে ঋণ আদায়ের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
অনেকে বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থায় ঋণ খেলাপ কম হওয়ার অন্যতম কারণ গ্রাহকদের সঙ্গে তাদের কর্মীদের চেনাশোনা। এ ক্ষেত্রেও সেই পরিচিতি কাজে লাগবে বলে নবান্নের আশা।