এমনিতেই দু’কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে না পেরে লোকসভা ভোটের আগে মোদী সরকারের কর্তাব্যক্তিদের চোখে ঘুম নেই। তার মধ্যেই বস্ত্র ও রত্নালঙ্কার শিল্পের মতো যে দু’টি ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হয়, সেখানেই রফতানি মার খেয়েছে। তার ফলে নতুন করে চিন্তা বেড়েছে মোদী সরকারের।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরে বস্ত্র ক্ষেত্রে যে ৪,৫০০ কোটি ডলারের রফতানির লক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল, তা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কঠিন। খুব বেশি হলে তা ৪,০০০ কোটি ডলারে পৌঁছতে পারে। তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে রফতানি কমেছে ৩.১ শতাংশ। গত বছরের এপ্রিল থেকে ফেব্রুয়ারিতে রফতানি মার খেয়েছে ৬ শতাংশেরও বেশি।
রত্নালঙ্কার শিল্পেরও একই ছবি। সেখানেও ২০১৭-’১৮-য় রফতানি কমেছে ২.৮ শতাংশ। তার থেকেও চিন্তার কারণ হল, শুধু গত বছরের এপ্রিল থেকে জানুয়ারিতেই রফতানি প্রায় ৯ শতাংশ কমেছে। সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, হংকং, আমেরিকা— ভারতীয় গয়নার প্রধান বাজারগুলির প্রায় সর্বত্র রফতানি মার খেয়েছে চোখে পড়ার মতো।
উপদেষ্টা সংস্থা ক্রিসিলের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ডি কে জোশী বলেন, ‘‘চিন্তার কারণ হল, বস্ত্র, রত্ন-অলঙ্কারের মতো শ্রমনিবিড় ক্ষেত্রে রফতানি মার খাওয়া।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, বস্ত্র রফতানিতে ভারত বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের মতো দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। জিএসটি চালু হওয়ার ফলে রফতানিকারীদের নগদের জোগানে টান পড়েছে। সেই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান হয়নি। তারও ছাপ পড়েছে রফতানিতে। তাছাড়া ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য তুলনামূলক ভাবে বেশি। ফলে বিশ্ব বাজারে ভারতের পণ্য দামের হিসেবে পিছিয়ে পড়ছে।
কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের হিসেব বলছে, ২০১৭-’১৮-য় দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৮৩ শতাংশ বেড়ে ৮,৭২০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এক দিকে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে রফতানি মার খেয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে ভারত আমদানির তুলনায় রফতানি বেশি করে। কিন্তু সেই ব্যবধান কমেছে। আর তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দামের বৃদ্ধি। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি মাথাচাড়া দিয়েছে।
মোদী সরকারের আসল চিন্তা অবশ্য কর্মসংস্থান নিয়ে। বস্ত্র ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান বাড়াতেই বিশেষ প্যাকেজ, নির্দিষ্ট মেয়াদের চাকরির ব্যবস্থা করেছিল মোদী সরকার। যাতে রফতানির বরাত পেলে প্রয়োজন মতো কর্মী নিয়োগ করতে পারে বস্ত্র শিল্পের সংস্থাগুলি। কিন্তু এখন সেই রফতানিও কমতে থাকায় বাণিজ্য মন্ত্রক চিন্তায় পড়েছে।