Price Hike

Share Market: মূল্যবৃদ্ধির আঁচ সত্ত্বেও সূচক ফের ৫৯ হাজারে

শেয়ার বাজার চাঙ্গা হলেও সব স্তরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার জন্য মোটেও ভাল নেই সাধারণ রোজগেরে মানুষ।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ ০৭:০৯
Share:

লম্বা লাফ দিয়ে নতুন অর্থবর্ষ শুরু করল শেয়ার বাজার। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

লম্বা লাফ দিয়ে নতুন অর্থবর্ষ শুরু করল শেয়ার বাজার। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের প্রথম দিনে সেনসেক্স ফের ৫৯ হাজারের ঘরে ঢুকে থিতু হয় ৫৯,২৭৭ অঙ্কে। পেট্রল-ডিজ়েল এবং আর বহু জিনিসের লাগাতার দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও কোন কারণে বাজার এমন উজ্জীবিত, এই প্রশ্ন ঘুরছে অনেকেরই মনে। শুধু বছরের প্রথম দিন নয়, তার তেজি ভাব দেখা গিয়েছে সপ্তাহ জুড়েই। গত সপ্তাহে সেনসেক্স মোট ১৯১৪ পয়েন্ট উঠেছে।

Advertisement

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অশোধিত তেলের অস্বাভাবিক উত্থান, আমেরিকা এবং ব্রিটেনে সুদের হার বৃদ্ধি ইত্যাদি নেতিবাচক শর্তকে হেলায় পাশ কাটিয়ে বাজারের এই উত্থানের পিছনে যে সব শক্তি কাজ করেছে তা হল—

কম দামে জ্বালানি তেল-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাশিয়ার ভারতকে সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস। যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে আলোচনার অগ্রগতি।বিভিন্ন রাজ্যে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির ভারতের শেয়ার বাজারে ক্রেতা হিসেবে প্রত্যাবর্তন।মার্চ মাসে রেকর্ড পরিমাণ জিএসটি আদায় (১.৪২ লক্ষ কোটি টাকা)। গত অর্থবর্ষে (২০২১-২২) ভারতীয় রেলের পণ্য পরিবহণ ১৫% বৃদ্ধি। হাজারো সমস্যা সত্ত্বেও গত অর্থবর্ষে সার্বিক ভাবে গাড়ির বিক্রি ১৩.২% বৃদ্ধি। জানুয়ারি থেকে মার্চ, এই তিন মাসে ফ্ল্যাট-বাড়ি বিক্রিতেও গতি আসা। একটি বেসরকারি আবাসন সংস্থার সমীক্ষা বলছে, এই সময় বিক্রি বেড়েছে ৭১%। যা সাত বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি। ফেব্রুয়ারিতে দেশের মূল আটটি পরিকাঠামো শিল্পে ৫.৮% হারে উৎপাদন বৃদ্ধি, যা ২০২১ সালের ওই মাসে সঙ্কুচিত হয়েছিল ৩.৩%।

Advertisement

অর্থাৎ বাজার মনে করছে, দেশে এবং বিদেশে নানা সমস্যা সত্ত্বেও অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে এই সমস্ত তথ্য এবং পরিসংখ্যান। তার উপরে গত অর্থবর্ষে শেয়ার সূচকও বেড়েছে ১৮ শতাংশের বেশি হারে, যা স্বস্তি জুগিয়েছে লগ্নিকারীদের মনে।

শেয়ার বাজার চাঙ্গা হলেও সব স্তরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার জন্য মোটেও ভাল নেই সাধারণ রোজগেরে মানুষ। দুধ, ওষুধ, পাঁউরুটি, ভোজ্য তেল ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে, যাতায়াতের খরচ এবং অন্যান্য অনেক পণ্যের দাম চলে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের নাগালের বাইরে। দাম যে ভাবে বাড়ছে, তাতে মার্চে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার হয়তো ইতিমধ্যেই অনেকখানি চড়ে গিয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান প্রকাশের পরে স্পষ্ট হবে। এপ্রিলে আরও মাথা তোলার আশঙ্কা।

এমন পরিস্থিতিতে এপ্রিলের বৈঠকে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি নির্ধারণ কমিটি কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই এখন দেখার। এ বারও তারা শিল্পের পুঁজি জোগাড়ের খরচ কম রাখাকে প্রাধান্য দিলে এবং সুদ বাড়িয়ে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ না টানলে, ভুগতে হতে পারে সাধারণ মানুষকে। চড়া মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমেরিকা ও ব্রিটেন সুদ বাড়ানোর পরে মধ্যবিত্তের মনে ক্ষীণ আশা জেগেছিল, এ বার হয়তো ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে সুদ কিছুটা বাড়ানো হতে পারে। কিন্তু তা হয়নি।

এ দিকে, নতুন অর্থবর্ষ সবে শুরু হয়েছে। গোড়া থেকেই আর্থিক পরিকল্পনা ছকে নিলে পরে কষ্ট কম হবে। কর সাশ্রয়ের লক্ষ্যে কিস্তিতে লগ্নি শুরু করা যেতে পারে এপ্রিল থেকেই। বছরের অসমাপ্ত কাজগুলিও গুটিয়ে ফেলতে হবে অতি দ্রুত। বছরের প্রথম দিনেই সরকার এ বার গত অর্থবর্ষের (২০২১-২২) আয়কর রিটার্নের (আইটিআর) ফর্ম প্রকাশ করেছে। এত আগে আইটিআর ফর্ম বার হয়ে যাওয়ায় এ বার সম্ভবত রিটার্ন দাখিলের শেষ তারিখ বাড়ানো হবে না। সেই কারণে কিছু দিনের মধ্যেই নেমে পড়তে হবে ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট জোগাড় করার কাজে। দ্রুত পাসবুক লেখানোর বিষয়টি সেরে ফেলতে হবে। জোগাড় করে রাখতে হবে টিডিএস সার্টিফিকেট। বিভিন্ন সূত্র থেকে আয়ের তালিকা মিলিয়ে নিতে হবে আয়কর পোর্টালে দেওয়া ফর্ম ২৬এএস এবং এআইএস-এর দেওয়া তথ্যের সঙ্গে। কোনও কর বকেয়া থাকলে তা জমা করা দরকার চটজলদি, রিটার্ন দাখিল করার আগেই। শেষ বেলার জন্য বসে না থেকে, চেষ্টা করতে হবে ৩০ জুনের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করে স্বস্তিতে থাকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন